"এসো আরবী শিখি-১" বই্টি শুরুর কিছু কথাঃ আরবী ভাষা কোরআন ও সুন্নাহর ভাষা। সুতরাং আরবী ভাষায় পূর্ণ পারদর্শিতা ছাড়া কোরআন-সুন্নাহ এবং শরীয়তের যাবতীয় ইলমের গভীরে প্রবেশ করা কিছুতেই সম্ভব নয়। একজন আরবের জন্য বিষয়টি অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও যাদের মুখের ভাষা আরবী নয় তাদের জন্য তা খুব কঠিন। এজন্য প্রয়ােজন যুগােপযােগী ও বিজ্ঞানসম্মত এমন এক পাঠপদ্ধতি অনুসরণ করা, যা শিক্ষার্থীকে অতি সহজে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। কিন্তু আমাদের দরসে নেযামিতে আরবী ভাষা শিক্ষার পদ্ধতিটি এতই ত্রুটিপূর্ণ ছিলাে যে, খুব কম ছাত্রই তাতে গ্রহণযােগ্য মান অর্জন করতে পারতাে। এ পদ্ধতির প্রথম দুর্বলতা ছিলাে এই যে, এখানে ভাষার অঙ্গনে প্রবেশ করা হতাে ব্যাকরণ তথা নাহ্ব-ছারফের মাধ্যমে, অথচ ভাষাশিক্ষার সবচে’ কার্যকর ও আধুনিকতম পদ্ধতি হলাে, ব্যাকরণের প্রত্যক্ষ প্রয়ােগ ছাড়া শুধু ব্যবহারিক উপায়ে ভাষার সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা, তারপর ব্যাকরণের মাধ্যমে ভাষাজ্ঞানকে সুসংহত করা। দ্বিতীয়ত শিক্ষার মাধ্যম ছিলাে উর্দু ও ফার্সি। তাই আরবী ভাষার আগে দু'টি বিদেশী ভাষার এক অসহনীয় ভার আমাদেরকে বহন করতে হতাে, অথচ তখনাে মাতৃভাষার সঙ্গেই আমাদের সঠিক পরিচয় হয়ে উঠেনি। এভাবে আমাদের সময় ও শ্রম ব্যয় হতাে প্রচুর, কিন্তু ফল হতাে খুব কম এবং এক আরবী ভাষার দুর্বলতার কারণে সর্বক্ষেত্রেই তার প্রভাব পড়তাে। আমি তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আল্লাহ যদি তাওফীক দান করেন, আমার শিক্ষকজীবনে আমি এ অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা করবাে, যাতে পরবর্তীরা সঠিক পথে অগ্রসর হতে পারে। তারা যেন সরাসরি মাতৃভাষার মাধ্যমে এবং সহজতম পদ্ধতিতে আরবী ভাষা শিখতে পারে। এ বিষয়ে সর্বপ্রথম আমি প্রেরণা লাভ করি আমার পরম শ্রদ্ধেয় উসতায হযরত পাহাড়পুরী হুযূরের কাছে। আমার জীবনে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষার মাধ্যমরূপে মাতৃভাষার বিকল্প নেই। এখন খুব সাধারণ মনে হবে, কিন্তু সে যুগে সেই পরিবেশে এটা ছিলাে এক অসাধারণ ঘটনা যে, তিনি আমাদেরকে রাওযাতুল আদব পড়িয়েছেন, উর্দুতে নয়, বাংলায়।