"নর্স মিথলজি" বইয়ের ভূমিকা থেকে নেয়াঃ গল্পে নর্স দেবতাদেরকে সম্রাট অথবা বীরযােদ্ধা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে করে খ্রিস্টান বিশ্বে খুব সহজেই সেগুলাে ছড়িয়ে দেয়া যায়। এমন কিছু গল্প আর কবিতা আছে, যা আমাদের অজানা অন্যান্য গল্পের ওপর আলােকপাত করে। কত কিছুই না হারিয়ে ফেলেছি আমরা! নর্স দেবীদের সংখ্যাও কিন্তু নেহাত কম নয়। তাদের অনেকের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য অথবা ক্ষমতার কথা আমাদের জানা আছে, কিন্তু অসংখ্য কাহিনী, পুরাণ, আচার অনুষ্ঠানের বিবরণ আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। দেবী ইর ছিলেন দেবতাদের চিকিৎসক, যদি আমি তার গল্প শােনাতে পারতাম! যদি শােনাতে পারতাম বিবাহের দেবী ললাফেনের গল্প অথবা প্রেমের দেবী সিয়ােফেনের কাহিনি! জ্ঞানের দেবী ভােরের কথা না হয় বাদই দিলাম! অনেক কিছুই হয়তাে কল্পনা করতে পারি, কিন্তু সেগুলাে মুখে বলার ক্ষমতা আমার নেই। সেই গল্পগুলাে হারিয়ে গিয়েছে, চাপা পড়েছে কালের অতল গহ্বরে, অথবা হয়েছে বিস্মৃত। যতটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সম্ভব আমি গল্পগুলাে বলার চেষ্টা করেছি। মূল প্রবাহ অব্যাহত রেখে যতটুকু আকর্ষণীয়ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, বজায় রেখেছি সে প্রয়াস। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্ণনার সাথে গল্পের প্রেক্ষাপট বিপরীতমুখী রূপ ধারণ করেছে। তবে আশা করছি, খুব স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট এক কালের নির্দিষ্ট এক জগতকে চিত্রায়িত করবে সে কাহিনিগুলাে। এই গল্পগুলাে নতুন করে লেখার সময় আমি হারিয়ে গিয়েছি সেই পুরনাে দিনগুলােতে, যখন নর্স পুরাণের গল্প পড়ে আমি কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতাম। সেই ভূমির কথা ভাবতাম যেখানে প্রথমবারের মতাে এই গল্পগুলাে বর্ণিত হয়েছিল। সুমেরু প্রভার উজ্জ্বল দীপ্তিময় আকাশের নীচে বসে অথবা অবিরাম গ্রীষ্মের কোন তপ্ত দুপুরে হয়তাে কোন এক গল্পকার শুনিয়ে যেতেন একের পর এক অমূল্য কাহিনী। উৎসুক শ্রোতাবৃন্দ আগ্রহ সহকারে জানতে চাইতেন। থর আর কী করেছিল, রঙধনু আসলে কী জিনিস, কীভাবে জীবন ধারণ করতে হয়, ছন্দ হীন কাব্যের উৎপত্তি কোত্থেকে? আমি বিস্মিত হয়েছি। লেখা শেষ করে যখন ধারাবাহিকভাবে পড়তে শুরু করেছি, তখন আবিষ্কার করলাম, পুরােটা যেন এক রহস্যময় যাত্রার মতাে লাগছে। এমন এক যাত্রা যেখানে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম ঘটেছিল আগুন থেকে, এমন এক যাত্রা যার অবসান ঘটেছে বরফের মাঝে। যাত্রা পথে দেখা হয়েছে লােকি, থর অথবা ওডিনের মতাে পরিচিত পরিজনদের সাথে। আবার দেখা হয়েছে এমন অনেকের সাথে যার সম্পর্কে আমি আরও জানতে চাই। এদের ভেতর আমার প্রিয় অ্যাংব্রোর নাম উল্লেখ করতে হয়। লােকির এই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম হয়েছিল অসংখ্য দানবের…..
পুরাে নাম নিল রিচার্ড ম্যাককিনন গেইম্যান, জন্ম ইংল্যান্ডের হ্যামশায়ারে। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা দিয়ে। এর পাশাপাশি বইপত্রের রিভিউও করতেন। প্রখ্যাত বৃটিশ পপ ব্যান্ড ডুরান ঢুর্যান-এর বায়ােগ্রাফি লেখার মধ্য দিয়ে তার লেখক জীবনের সূচনা । এর পর গল্প-উপন্যাস থেকে শুরু করে কমিক্স, গ্রাফিক নভেল, থিয়েটারসহ চলচ্চিত্রের জন্যেও স্ক্রিপ্ট লিখেছেন তিনি। দ্য স্যান্ডম্যান নামের কমিক্স ' বইটিই তাকে খ্যাতি এনে দেয়। হুগাে, নেবুলা, ব্রামস্টোকার অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই জনপ্রিয় লেখক।