তৎকালীন দক্ষিণ বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) থেকে একটু বাইরের এলাকা তেমকার মহল্লায় ১৯৫৫ সালের ২৬শে ডিসেম্বর জন্ম হলো এক ছেলে শিশুর। বাবার নাম ইব্রাহীম কস্কর। শিশুটা তার বাবা-মা'র দ্বিতীয় সন্তান। শিশুটার জন্মের আগে পীর নিরালা শাহ মন্তব্য করেছিলেন, ইব্রাহীম কস্করের এই সন্তান একদিন অনেক ধনী ও প্রতাপশালী হবে। বাবা তার নাম রাখলেন দাউদ ইব্রাহীম কস্কর। সেদিন তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি এই দাউদই একদিন চারদিক কাঁপানো আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন হিসেবে নিজেকে তুলে ধরবে। সৎ পুলিশ কনস্টেবল ইব্রাহীম কস্করের দ্বিতীয় পুত্র দাউদ ইব্রাহীম কিশোর বয়স থেকেই টুকটাক অপরাধের সাথে জড়িত হওয়া শুরু করে। আর এর সূত্র ধরেই ধীরে ধীরে সে জড়িয়ে যায় ইন্ডিয়ান আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে। হাজি মাস্তানের মতো ডনকেও পাশ কাটিয়ে অন্ধকারের জগতে তৈরি করে নেয় নিজের শক্ত অবস্থান। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে দাউদের প্রতাপ ছড়িয়ে পড়ে বিদেশেও। নানা বৈধ আর অবৈধ ব্যবসায় সরাসরি বিনিয়োগ করা শুরু করে সে। সহকারী হিসেবে জুটে যায় ছোটা রাজন, ছোটা শাকিলের মতো কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা। আর সেই সাথে বিরোধী পক্ষের ডন আর গ্যাংস্টারদের সাথেও সমানুপাতিক হারে চলমান থাকে রক্তক্ষয়ী সংঘাত। আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন হিসেবে তার উত্থানের এক পর্যায়ে কুখ্যাত মুম্বাই হামলার জন্য অভিযুক্ত হতে হয় তাকে। ছাড়তে হয় দেশ। নিজের সাম্রাজ্য দুবাইয়ে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় ডন দাউদ ইব্রাহীম। মহাপরাক্রমশালী ডন হওয়া সত্ত্বেও দাউদ ইব্রাহীমকে ছুটে বেড়াতে হয়েছে পৃথিবীর এক দেশ থেকে আরেক দেশে। বারবার মুখোমুখি হতে হয়েছে চোরাগুপ্তা হামলার। ডংরির আড়ম্বরহীন পরিবেশে বেড়ে ওঠা সাধারণ এক বালকের কুখ্যাত মাফিয়া ডন হয়ে ওঠার রোমাঞ্চকর গল্প এটা। যেখানে শুধু দাউদের কথা না, উঠে এসেছে মুম্বাই মাফিয়ার পুরো ছয় দশকের রক্তাক্ত ইতিহাস। পাঠ প্রতিক্রিয়া : ইন্ডিয়ার ক্রাইম রিপোর্টার এস. হুসেইন যায়েদী তাঁর তদন্তনির্ভর সাংবাদিকতার জন্য বিখ্যাত। দীর্ঘদিন মুম্বাই মিরর, এশিয়ান এইজ সহ একাধিক স্বনামধন্য পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি। তাঁরই কলম থেকে নির্ভীকতার সাথে উঠে এসেছে 'ডংরি টু দুবাই' নামের মুম্বাই মাফিয়ার ছয় দশকের এই উপাখ্যান। যায়েদী একেবারে মুম্বাইয়ের (তৎকালীন বোম্বে) অপরাধজগতের ইতিহাস মোটামুটি শুরুর দিক থেকেই শুরু করতে চেয়েছেন। যেখানে প্রাধান্য ছিলো মাফিয়া বা সংঘবদ্ধ অপরাধের বিষয়টা। সেই সূত্রে স্বাভাবিকভাবেই বেরিয়ে এসেছে দাউদ ইব্রাহীমের নাম। আরো একটা আস্ত অপরাধ বিষয়ক ইতিহাস। ডন দাউদ ইব্রাহীম কস্করের সাথে সম্পর্কিত সকলের ব্যাপারেই লেখক আমাদেরকে কমবেশি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। পূর্ববর্তী ডনেরা, যেমন : হাজী মাস্তান, করিম লালা, বাসু প্রমুখের ব্যাপারে জানতে পেরেছি। তেমনই ধারণা পেয়েছি দাউদের সমসাময়িক সাদা পাউলে, মানিয়া সুরভে, দিলীপ বুওয়া, বাবু রেশিম, মায়া ডোলাস, ছোটা শাকিল, ছোটা রাজন সহ আরো কয়েকজন গ্যাংস্টারের ব্যাপারে। এদের কেউ ছিলো দাউদের কুখ্যাত ডি কোম্পানির অংশ আবার কেউ ছিলো তার বিপক্ষদলের। তবে সবাইকে ছাপিয়ে দাউদ ইব্রাহীম সবসময়ই থেকে গেছে অনেক উচ্চ অবস্থানে। রহস্যের গাঢ় চাদরে নিজেকে ঢেকে রেখেছে সবসময়ই। আমি খুবই চমকৃত হয়েছি মুম্বাই মাফিয়ার বলিউড কানেকশনের অংশগুলো পড়তে গিয়ে। সেই সাথে বিস্মিত হয়েছি দাউদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতি দেখে। এস. হুসেইন যায়েদীর এই বইটা পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিলো বই না, বরং কোন পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টের ফলো আপ পড়ছি। ডন দাউদ ইব্রাহীমের ব্যাপারে যে কৌতুহল ছিলো, তার অনেকটাই নিবৃত্ত হয়েছে 'ডংরি টু দুবাই' পড়ে। রাফসান রেজা রিয়াদের রূপান্তর সহজ ও সাবলীল ছিলো। প্রথম হিসেবে তো অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ দেখিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে আরো ভালো করবেন আশা করি। তবে প্রচুর প্রিন্টিং মিসটেক ছিলো। মূল প্রচ্ছদ অবলম্বনে আদনান আহমেদ রিজনের প্রচ্ছদটা ভালো লেগেছে। ডন দাউদ ইব্রাহীমের জগতে একটু ঢুঁ মেরে আসতে চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন 'ডংরি টু দুবাই'।