মানসিক শক্তি বৈষয়িক সম্পদেরই এক প্রকাশ, অন্যদিকে মানসিক শক্তি বৈষয়িক সম্পদ বৃদ্ধির অপরিহার্য শর্ত। বৈষয়িক সম্পদ ও মানসিক শক্তির সম্পর্কের জটিল স্বরূপ সম্পর্কে লেখকের অনুভব-জাতীয় জীবনে বাঙালির ভাবান্বেষী সত্তা যেন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাঁর মনে হয়েছে, আমাদের অস্তিত্বের ও উত্থানের প্রয়োজনে সৃষ্টিশীল জ্ঞানের ও সৃষ্টিশীল সাহিত্যের প্রস্তুতিতে আমাদের প্রয়াসকে কেন্দ্রীভ‚ত করা দরকার। এ-বইয়ের লেখাগুলোর মর্মে আছে বাংলা ভাষায় উন্নত নতুন সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞান সৃষ্টির আশা। চলমান সংস্কৃতিকে ইতিহাসের অন্তর্গত করে প্রগতিশীল নতুন জাতীয় সংস্কৃতি সৃষ্টির প্রেরণা জাগে এই লেখাগুলো পড়লে। লেখকের সত্যনিষ্ঠ, সাহসী, সৃষ্টিশীল, ভবিষ্যৎমুখী চিন্তার বৈশিষ্ট্য এই লেখাগুলোতে পূর্ণ মাত্রায় বর্তমান। আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, বাঙালি শুধু ইউরোপ-আমেরিকার প্রতিধ্বনি নয়, আর্যাবর্ত-ব্রজাবর্তের, মক্কা-মদিনার, কিংবা মস্কো-পিকিঙের প্রতিধ্বনিও বাঙালি নয়। বাঙালির স্বকীয় সত্তা আছে, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে, সমস্ত সম্ভাবনা আছে। এ-বইয়ের প্রতিটি লেখাই পাঠকমনে বিশ্ববাস্তবতাকে পটভূমিতে রেখে বাঙালির স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য ও সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার তাগিদ জাগায়।
Abul Kashem Fozlul Haque আবুল কাসেম ফজলুল হক ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর গোটা পেশাজীবন কাটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে গবেষণা ও শিক্ষকতায়। ২০১১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। তখন তাঁর লেখার বিষয়বস্তু ছিল সৌন্দর্য, প্রেম, প্রকৃতি ও জীবনদর্শনের অনুসন্ধিৎসা। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি ১৯৬০-এর দশকে ছাত্র-আন্দোলনের প্রগতিশীল ধারায় সক্রিয় ছিলেন। সংস্কৃতি সংসদ, সুকান্ত একাডেমি, উন্মেষ, বাংলাদেশ লেখক শিবির, স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ প্রভৃতি সংগঠনে থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তা ও কর্মে সক্রিয় ছিলেন এবং সর্বজনীন কল্যাণ ও প্রগতিশীল নতুন ভবিষ্যতের আশায় ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে লিখে চলছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঢাকা শহরে থেকে পরিচিত ও স্বল্পপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানত অর্থ সংগ্রহ করে দিয়ে ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছেন। আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৬০-এর দশক থেকে নতুন রেনেসাঁস আকাক্সক্ষা করেন। তিনি মনে করেন ভালো কিছু করতে হলে হুজুগ নয়, দরকার গণজাগরণ। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি সকল বিষয়ে তাঁর লেখায় প্রগতির তাড়না কাজ করে।