"ইউরেনিয়াম রহস্য" বইয়ের ভূমিকা: সত্যজিৎ রায়ের ফরমায়েশ অনুযায়ী “সন্দেশ” পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের জন্য একটি বিজ্ঞানভিত্তিক রহস্য উপন্যাস (ইউরেনিয়াম রহস্য) লিখছিলাম। উপন্যাসটিকে ফ্যানট্যাসি (যে কল্পনা বিজ্ঞানকে ছাড়িয়ে যায়) ঘেঁষা করেছিলাম, কারণ “হীরক রাজার দেশে” ছবির ব্যাপারে হীরক-সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক আলােচনা করতে গিয়ে সত্যজিতের - ফ্যানট্যাসি প্রীতির পরিচয় পেয়েছিলাম। “হীরক রাজার দেশে” ছবি তুলতে গিয়ে প্রাচীনকালের খনি সম্পর্কে বিস্তর পড়াশুনা করেছিলেন সত্যজিৎ। এই সব পঠন পাঠনের মধ্য দিয়ে তার মনে হয়েছিল, সুদৃর প্রাচীনকালে যখন আদিম মানুষের খনির ব্যাপারে কোনাে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বা প্রযুক্তিগত কোনাে দক্ষতা ছিল না, তখন জনবসতিশূন্য অরণ্য অঞ্চলে এমন সব খনি (যথা সিংভূমের তাম্র ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রাচীন খনি, মধ্যভারতে হীরের খনি) গড়ে উঠেছিল, যাদের পরীক্ষা করে চূড়ান্ত প্রযুক্তিগত এবং খনিজ-বৈজ্ঞানিক দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায়। সত্যজিতের মতে এই সব খনি গ্রহান্তরের মানুষদের কীর্তি। এইসব খনির মধ্যে তারা যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও কুশলতার স্বাক্ষর রেখে গেছে, তা আধুনিক খনিজ ও খনিবিদদের প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে ছাড়িয়ে যায়। | সত্যজিতের মতে মিশরের পিরামিড এবং বুদ্ধগয়ার কাছে বরাকর পাহাড়ের নিখুঁতভাবে পালিশ করা অতিকায় পাহাড়প্রমাণ গ্রানাইট (যার ওপরে সম্রাট অশােকের শিলালিপি উৎকীর্ণ), গ্রহান্তরের প্রযুক্তিবিদদের কীর্তি, কারণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত দক্ষতা দিয়েও পিরামিড নির্মাণ বা অতিকায় আকারের পাহাড় পালিশ করা সম্ভব নয়। সত্যজিতের কল্পবিজ্ঞান-ভাবনার অনুসরণে ‘ইউরেনিয়াম রহস্য” লিখেছিলাম, সন্দেশে প্রকাশের আগে সানন্দে তিনি তাকে বিচিত্রিত করেছিলেন। “ইউরেনিয়াম রহস্য” বইয়ের আকারে প্রকাশের আগ্রহে তিনি তাঁর আঁকা ছবিগুলির ব্লক আমাকে দিয়েছিলেন। আধুনিক মুদ্রণের প্রযুক্তিগত উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে ঐ ব্লকগুলির প্রয়ােজন ফুরিয়েছে, নিউ বেঙ্গলের শ্রী প্রবীরকুমার মজুমদারের আগ্রহে “ইউরেনিয়াম রহস্য’ সন্দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের প্রায় ত্রিশ বছর বাদে বইয়ের আকারে প্রকাশিত হচ্ছে।