"শ্বাপদ ও দ্বিপদ" বইটি সম্পর্কে: অতিরিক্ত আকর্ষণীয় হয়। শ্বাপদ ও দ্বিপদ’ তারই এক অনন্য উদাহরণ। জ্যাক লন্ডনের দুরন্ত জীবন ও সাহিত্যের ধারার সঙ্গে ময়ুখ চৌধুরীর অনেকটাই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ময়ূখের জীবন ও সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি খুব পরিশীলিত ও সযত্ন লালিত নয়। ফলে ‘হোয়াইট ফ্যাং’-এর বাংলায় অনুবাদ হওয়া সত্ত্বেও এবং সে-কাজ বরেণ্য লেখক না করে থাকলেও এই লেখাটির জাত একেবারেই আলাদা। লাগামছাড়া বেপরোয়া জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়েই সাহিত্য রচনা করেছেন জ্যাক লন্ডন। এক নিষ্ঠুর রূঢ় জীবনের বাস্তবিক খোঁজ পেয়ে চমকে ওঠেন তাঁর পাঠক। সেই পৃথিবীতে শক্তিই এখমাত্র যুক্তি, অথবা বেঁচে থাকার লড়াই এতটাই তীব্র যে নীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগ নেহাতই কম। সেখানে প্রকৃতি, মানুষ আর বন্য জীবন প্রতি মুহূর্তে ব্যস্ত তাদের আদিম সংঘাতে। সভ্যতার পথ বেয়ে বহু যত্নে সাজানো নিরাপদ আপসের স্তরগুলো যখন ভেঙে পড়ে, আমাদের মধ্যে এক আদিম মানুষের মুখ খুঁজে পাই বন্য পৃথিবীর অনুষঙ্গে—সেই প্রথম যুগের মানবসমাজ ও তাদের জীবনচর্চার পটভূমিতেই গড়ে উঠেছে শ্বাপদ ও দ্বিপদ। জ্যাক লন্ডনের ‘কল অফ দ্য ওয়াইল্ড’ এবং তার দ্বিতীয় ভাগ ‘হোয়াইট ফ্যাং’ শুধু আমেরিকা নয়, সারা পৃথিবীতে সাড়া জাগিয়ে তোলে। বাংলা সাহিত্যের পাঠক ময়ূক চৌধুরীর এই বইয়ের মাধ্যমে সেই পটভূমির শব্দ-গন্ধ-স্পর্শ নিবিড়ভাবে অনুভব করবেন। ময়ূখ চৌধুরী কিশোর-পাঠকদের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন তার লেখালেখি এবং আঁকা ছবির চমৎকারিত্বে। বিখ্যাত একটি পত্রিকায় তাঁর একাধিক ধারাবাহিক চিত্ৰকাহিনি পাঠকদের মধ্য জনপ্রিয় ছিল। বিভিন্ন লেখকের রচনার সঙ্গে তাঁর আঁকা ছবিও ছিল আকর্ষণীয়। তার অপ্রকাশিত এই রচনাটি প্রকাশ করে নিউ বেঙ্গল প্রেস বাঙালি পাঠকের কাছে একটি ভিন্ন স্বাদের সাহিত্য পরিবেশনের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রকৃতই কৃতজ্ঞভাজন হয়ে রইলেন। অপেক্ষায় থাকবো, আগামী দিনে আরও কোনো অপ্রকাশিত ময়ূখ চৌধুরী তাদের ঝুলি থেকে বের করে আমাদেক চমকে দেন কিনা তার জন্য! গোপনে বলে রাখি, হলেও অবাক হবেন না। জানুয়ারী, ২০১৩ নির্বেদ রায়