ভূমিকা প্রবীণ মহিলা-সাহিত্যিক সুরুচিবালাতরায় (জন্ম ১৩০৭ সাল, ১১ই কার্তিক, মৃত্যু ১৩৮৫ সাল, ১৮ই ফাল্গুন) একসময় তাঁর গল্প ও উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছিলেন। তাঁর ‘দুয়ে’ ‘বিবাহ - বিচ্ছেদ' প্রভৃতি গল্প পড়ে তাঁর সমসাময়িক লেখকরা তাঁর সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্ববোধকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। ১৩৩০ বঙ্গাব্দে মাত্র তেইশ বছর বয়সে তিনি লিখেছিলেন ‘ঝরাপাতা’ উপন্যাস। বিবাহিতা নারীর মর্মবেদনার দুঃসাহসী আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এই উপন্যাসের মধ্যে। ‘আহুতি' ও ‘মর্মস্মৃতি' শীর্ষক দুটি ছোটগল্পের সঙ্কলন, প্রবাসী, ভারতবর্ষ, বসুমতী, শুকতারা প্রভৃতি সাময়িক পত্রে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ছোটগল্প, প্রবন্ধ, রম্যরচনা ও কবিতা এবং “মীরা” নামক আর একটি উপন্যাসে সুরচিবালার প্রতিভার স্বাক্ষর চিহ্নিত হয়ে আছে। “মীরা” প’ড়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে প্রবাসীতে তার ওপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। বুক ফাটলেও মুখ ফোটে না এমন সব মেয়ের মনের গুপ্ত বেদনা বিস্ময়কর দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলে সুরুচিবালা পঞ্চাশ-ষাট বছর আগেকার বাঙালি পাঠক-পাঠিকাদের অভিভূত করেছিলেন। নারীহৃদয়ের মর্মবেদনা চূড়ান্তভাবে ফুটে উঠেছে বিষ্ণুপ্রিয়ার এই জীবন আলেখ্যের মধ্যে। এই বইটি প্রকাশ করে শ্রীঅরুণ চন্দ্র মজুমদার এই অসাধারণ লেখিকাকে বিস্মৃতির অন্তরাল থেকে উদ্ধার ক'রে বাঙালি পাঠক-পাঠিকাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হলেন।