দিন যায় কথা থাকে। থেকে যায় স্মৃতি। এখন প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার কত কী। প্রিয়জন পৃথিবীর যে-প্রান্তেই থাকুক, তার সাথে যোগাযোগ এখন মুহূর্তের ব্যাপারমাত্র। কমপিউটার বা মোবাইল টেলিফোনের দু’-চারটা বাটন টিপলেই হলো। অথচ আজ থেকে মাত্র বছরবিশেক আগেও এমন ছিল না। কমপিউটার ছিল, কিন্তু অনেক দূরের বস্তু। ও দিয়ে যোগাযোগ? জানাই ছিল না আমাদের। মোবাইল টেলিফোন-তো কল্পনাতেও ছিল না। আর ল্যান্ডফোন! তার ঝক্কি-ঝামেলা নিয়ে আস্ত একটা বই-ই লেখা যায়। তাই মানুষে মানুষে যোগাযোগের সবচাইতে সহজ মাধ্যম ছিল চিঠি। মানুষ প্রিয়জনকে চিঠি লিখত। সেই চিঠি খামে ভরে খামের উপর ডাকটিকেট লাগিয়ে ডাকবাক্সে ফেলতে হতো। তারপর রানারের কাঁধে চড়ে গ্রাম-গ্রামান্তর, দেশ-মহাদেশ পেরিয়ে চিঠি পৌঁছে যেত প্রিয়জনের কাছে। তারপর অপেক্ষা, ওপারের মানুষটি কখন চিঠির জবাব দেবে। সেই চিঠি আসবে এই চিঠির লেখকের কাছে। সেই অপেক্ষা আর চিঠি পাওয়ার মুহূর্তটি কী যে মধুর, সে কথা বলে বোঝানোর মতো নয়। এ-ই হলো সংক্ষেপে চিঠির ইতিবৃত্ত। তবে সে সময় মানুষ যে শুধু পরিচিতজনদের কাছে চিঠি লিখত, তা নয়। চিঠি অপরিচিত মানুষকেও পরিচিত বানাত, বানাত বন্ধু। পত্রপত্রিকায় ঠিকানা পেয়ে কেউ অপর কাউকে চিঠি লিখত, বানাতে চাইত পত্রমিতা, কলমবন্ধু। আবার মানুষে মানুষে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়ার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাও ছিল। ওদের ছাপানো কাগজে থাকত অনেকের নাম, ঠিকানা, পেশা, বয়স, শখ ইত্যাদি। তা দেখে যে যার পছন্দমতো নাম-ঠিকানায় চিঠি লিখত। হয়ে যেত পত্রমিতা। পত্রমিতার চিঠি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের শহরে-গ্রামে তরুণ-যুবকরা ডাকপিওনের পথ চেয়ে থাকত। চিঠি পেলে খুশির সীমা নেই, না পেলে বিষণ্ন মন।
এখন আর সেসব দিন নেই। প্রযুক্তি দূরের মানুষকেও ধরে রেখেছে হাতের মুঠোয়। চিঠি তাই প্রায় হারিয়ে গেছে মানুষের জীবন থেকে। তা হতেই পারে; জীবনের কত কিছুই তো হারিয়ে যায়। কিন্তু হারানো দিনের স্মৃতি ধরে রাখতে মানুষ আবার জাদুঘরও বানায়। তোমরা কেউ যদি এ বইটি পড়ে থাকো, তাহলে বলি—এ বইয়ের গল্পগুলো দিয়ে সেই রোমাঞ্চকর, বুককাঁপানো, মন কেমন-করা চিঠি পাওয়ার, চিঠি লেখার দিনগুলোর কথা কাগজের বুকে ছাপার অক্ষরে ধরে রাখতে চেয়েছি। গল্পগুলো যদি তোমাদের ভালো না-ও লাগে, তবু বড়দের ছোটবেলার কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলো। চিঠি হারিয়ে গেছে। হয়তো একসময় কাগজের বুকে ছাপার অক্ষরও থাকবে না। সেসব কেমন দিন হবে, কে জানে! সেই অনাগত দিনের কথা ভেবে, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কিশোর-তরুণদল, তোমাদের জন্য আমার এ ছোট্ট বই। তোমরা সবাই ভালো থেকো।
Humayun Sadeque Chowdhury- জন্ম চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ি গ্রামে; ১৯৬০ সালের ৪ মার্চ। ছোটবেলা থেকে বইয়ের সঙ্গে সখ্য। সেই সূত্রে লেখালেখির জগতে। মূলত শিশুসাহিত্যই তার অঙ্গন, আরো নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয়, ছড়ার রাজ্যেই তার প্রধান পদচারণা। হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী পড়েন বেশি, লিখেন কম। ফলে তার প্রথম লেখা ১৯৭৬ সালে ছাপা হলেও প্রথম বই কিশোরকবিতাগ্রন্থ এক কিশোরের মন প্রকাশ হয় তার দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পরে, ২০০৯ সালে ; অ্যাডর্ন থেকেই। এবার বেরুলো তার দ্বিতীয় বই। সাংবাদিকতা পেশাসূত্রে-যে বিচিত্রসব ঘটনা ও বিষয়ের সঙ্গে তাঁর নিত্য বসবাস, মননশীল এ বই তারই হস্তলিপি।