"মুনাজাতে মাকবুল" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: দু'আ হচ্ছে ইবাদতের সার। ঈমানদারের অস্ত্র। এটা সঙ্গে থাকলে আমরা কখনও ব্যর্থ হব না; এটা ছাড়া আমরা কখনও সফল হতে পারব না। দু'আ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে চুপি চুপি কথা বলা - সবচেয়ে উন্নত, স্বাধীন, শক্তিশালী এবং পরিশুদ্ধ কথোপকথন। দৈনন্দিন আমলের জন্য এই কিতাবে (The Accepted Whispers) কুরআন ও হাদীস থেকে দু’শর বেশি দু’আ সন্নিবেশিত করা হয়েছে যেখানে দু’আর অর্থ ও টীকা সংযুক্ত করা হয়েছে। টীকায় নির্দিষ্ট দু'আর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, অর্থ, ফযায়েল এবং বিশেষ তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে। কিতাবটি মূলত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. মুনাজাতে মাকবুল নামে সংকলন করেছিলেন। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. (১২৮০-১৩৬২ হিজরী/১৮৬৩-১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ), সাধারণভাবে হাকীমুল উম্মত (উম্মতের চিকৎসক) নামেই অধিক পরিচিত, বিশ শতকের একজন বিজ্ঞ এবং বিখ্যাত ইসলামিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ইসলামের সকল শাখায় যেমন কুরআন, হাদীস, ফিকহ এবং তাসাওউফে তার পাণ্ডিত্য ছিল অসাধারণ। তিনি এক হাজারের বেশি কিতাব লিখেছেন। খালেদ বেগ পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। আল-বালাগ ই-জার্নালের সম্পাদক। ইসলাম এবং সমসাময়িক বিষয়ের উপর ১৯৮৬ সাল থেকে লিখছেন। তার বিখ্যাত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে First Things First, Slippery Stone: An Inquiry into Islam's Stance on Music উল্লেখ্য।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।