"নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা"বইটির ভূমিকা: মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ পাকের যথাযযাগ্য প্রশংসা করা মানুষের পক্ষে অব। তাঁহার যথাযােগ্য প্রশংসা কেবল উহাই, যাহা তিনি নিজেই করিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ ও সালামের পর আমি এই অযােগ্য বহুদিন যাবত দেখিয়া আসিতেছি যে, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার হাজার হাজার মক্তবে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে পুরাতন রীতি অনুযায়ী লেখাপড়া করিতেছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় যে, পড়ার নামে কিছু হয় না, শুধু সময় অপচয়। অথচ, আল্লাহ রাব্দুল আলামীন ১৪০০ বৎসর পূর্বে নিজ কালামে পাকে ঘােষণা করিয়াছেন যে “আমি কুরআন শরীফকে আমার স্মরণের জন্য অতি সহজ করিয়া দিয়াছি।” আল্লাহর এই ঘােষণা চিরন্তন সত্য। যার মাঝে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নাই। তবে এই বিষয়ে শুধুমাত্র গবেষণার অভাব। আমি যদিও অত্যন্ত অযােগ্য, তথাপি আল্লাহ পাকের সত্যবাণী ও তাঁহার দয়ার উপর ভরসা করিয়া আল্লাহ রাব্বল আলামীনের নিকট কায়মনােবাক্যে আরাধনা করিতে আরম্ভ করিলাম, “হে বারী তাআলা” আপনি কুরআন শরীফকে অতি সহজ বলিয়া ঘােষণা করিয়াছেন, তাহা নিঃসন্দেহে সত্য, কিন্তু সেই পথ হারাইয়া ফেলিয়াছি। অতএব আপনি আমাদিগকে আপনার বর্ণিত সহজ পথ দেখাইয়া দিন, অতপর এই বিষয়ে চিন্তা করিতে আরম্ভ করিলাম । আল্লাহ পাক দয়ার সাগর, করুণার আধার। তাঁহার অনুগ্রহ অফুরন্ত । নিশ্চয়ই তিনি ইহার জন্য আমাদিগকে সহজ পথ দেখাইয়া দিবেন। এই। বিশ্বাস লইয়া আল্লাহর দরবারে চারটি আবেদন পেশ করিলাম। | ১। কোন একজন মুসলমানের ছেলেমেয়েও যেন কুরআন শরীফ ও জরুরিয়াতে (আবশ্যকীয়) দ্বীন শিক্ষা হইতে বঞ্চিত না হয়। ২। কুরআন মাজীদ যেন বা-তারত্বীল, ছহীহ শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করিতে পারে। ৩। এক একজন শিক্ষক যেন শতাধিক ছেলেমেয়েকে একসাথে শিক্ষাদান করিতে পারে। ৪। শিক্ষা-প্রণালী যেন সুন্দর ও সুশৃংখল হয়। আল্লাহ রাব্বল আলামীন নিজ দয়াগুণে উপরােল্লিখিত চারটি আবেদনকে দীর্ঘ ৪২ বৎসর অক্লান্ত সাধনার পর নূরানী পদ্ধতির মাধ্যমে কিঞ্চিত সাফল্যের পথ দেখাইয়াছেন । আমাদের দেশে পূর্বে মক্তবগুলােতে পড়া-লেখার কোন সুষ্ঠু শৃংখলা ছিল না। যথা বৎসরের শুরু ও শেষ ছিল সারা বৎসর নতুন ভর্তি করা হইত। যার দরুন শিক্ষার নির্দিষ্ট কোন বিষয়বস্তুও ছিল না। প্রত্যেক ওস্তাদ নিজ নিজ খুশিমত পড়াইয়া সময় কাটাইতেন। তাই বিংশ শতাব্দীর শিক্ষা ও বিজ্ঞানের এই চরম উন্নতির যুগে আধুনিক শিক্ষিত সমাজ নিজ নিজ ছেলেমেয়েদিগকে মক্তবে পাঠানােকেই সময় অপচয় বলিয়া মনে করিতেন। কিন্তু এখন আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহ ও তাঁহার অশেষ মেহেরবানীতে আমাদের নূরানী পদ্ধতির মাধ্যমে মক্তবের ছেলেমেয়েরা অক্ষরজ্ঞান হইতে আরম্ভ করিয়া সম্পূর্ণ কুরআন মাজীদ ছহীহ্ শুদ্ধ করিয়া পাঠ করিতে পারে এবং ৬৫টি হাদীস শরীফ অর্থসহ মুখস্থ করার সাথে সাথে মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা করিতে পারে। পরিশেষে পরম দয়ালু, দয়াময় স্রষ্টার নিকট এই কামনা করি যে, তিনি যেন তাঁহার অশেষ অনুগ্রহে এই শিক্ষা পদ্ধতিকে আরাে সহজ ও উন্নত করিয়া সারা পৃথিবীর মুসলমানের মুক্তির পথকে সহজ করিয়া দেন এবং এর সাথে সাথে তাঁহার পুরস্কৃত বান্দাদের কাতারে এই অধমকেও শামিল করেন। আমীন!