জলের ধর্ম জলত্ব, আগুনের ধর্ম আগুনত্ব, মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব-রবীন্দ্রনাথের এই কথায় বিজ্ঞান ও দর্শনের মিশেল আছে, আছে জীবনবোধের শুভকল্যাণময়তা। রেনেসাঁ গির্জা থেকে ধর্মকে মুক্ত করে নিয়ে এসেছিল ব্যক্তিমানুষের অধ্যাত্মবোধের পরিসরে। তারপর থেকে মনীষী-দার্শনিক-বিজ্ঞানী-ধর্মবেত্তারাও ধর্ম নিয়ে ভেবেছেন, নানা তত্ত্বচিন্তা প্রকাশ করেছেন। উনিশ-বিশ শতকের বাংলাদেশেও রাজা রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র, দেবেন্দ্রনাথ প্রমুখ ধর্মের স্বরূপ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ পারিবারিকভাবে ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী হয়েও জীবনের প্রথম পর্যায় থেকেই নিজের ধর্মমত নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন। তারই একটি পর্যায় তাঁর এই ব্রহ্মভাবনা। এই গ্রন্থটিতে সেই ব্রহ্মভাবনার বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা সন্ধান করা হয়েছে। রাবীন্দ্রিক ব্রহ্মের স্বরূপ অনুধাবন করা হয়েছে মননশীল চিন্তার আলোকে। তাঁর রচিত চারটি ব্রহ্মসংগীতের পাঠও লিপিবদ্ধ হয়েছে। আজকে ধর্মান্ধতা ও সাম্রাজ্যবাদী কূটকৌশলাশ্রয়ী যে ক্রূর মানবতাবাদবিরোধী চর্চা শুরু হয়েছে তাকে প্রতিরোধ করতে হলে ধর্মের প্রকৃত সত্য জানা আবশ্যক। রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মভাবনা গ্রন্থটি সেই জানারই একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।
গবেষক ও প্রবন্ধকার বেগম আকতার কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পিতা মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, মা মজিদা বেগম। বেগম আকতার কামাল ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘বিষ্ণু দে-র কবিমানস ও কাব্য’ শীর্ষক গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।