"মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: মুক্তিযুদ্ধ বিবেচিত হয়েছে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম' হিসেবে। সমাজের সামগ্রিক পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রচলিত প্রতিক্রিয়াশীল সমাজকে নাকচ করে দিয়ে নতুন চিন্তা-দর্শনের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের মাধ্যমে, মুক্তিযুদ্ধ জাতীয়তাবাদের প্রগতিশীল ধারাকে বিকশিত করার পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ, প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজের প্রেরণা জোগায়। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল সমাজতন্ত্রের ধারায় অগ্রসর হওয়া। স্বাভাবিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের ৪ ভিত্তি হিসেবে তাই নির্ধারিত হয় গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র। আদর্শিক কারণেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে সাম্রাজ্যবাদবিরােধিতা আর সমাজতন্ত্রমুখীনতা ছিল দীর্ঘদিনের গণসংগ্রামের ধারায় গড়ে ওঠা একটি স্বাভাবিক বিষয়। প্রসঙ্গত বলা যায়, কেবল বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয়, তৃতীয় বিশ্বের সকল দেশের মুক্তিকামী জনগণের কাছেই সমাজতন্ত্র মুক্তি লাভের পথ হিসেবে বিবেচিত। সমাজতন্ত্রের পীঠস্থান ছিল সােভিয়েত ইউনিয়ন। তাই, সমাজতন্ত্রের আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সােভিয়েত রাষ্ট্রের আদর্শিক অবস্থানই পূর্ব বাংলার মানুষকে আকৃষ্ট করে তােলে। তারা হয়ে ওঠে সােভিয়েতমুখী। মুক্তিযুদ্ধের মর্মবাণী উপলব্ধি করলেই বােঝা যায়, সােভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধন ছিল স্বাভাবিক ও অপরিহার্য।