বাবা যখন ছোটো বইয়ের সামারিঃ বাবা যখন ছোটো বইটিতে ২৮টি ছোট ছোট গল্প আছে। বাবার ছোট বেলার গল্প বলা হয়েছে মেয়ে মুখের ভাষ্যে। সন্তানরা সবচেয়ে খুশি হয় যখন সে বাবার মুখে তাঁর ছোটবেলার গল্প শুনে তারাও ভাবতে পারে তাঁর এতো বড় বাবাও একদিন পুঁচকে ছিলো, তাঁর মতই দুষ্টমি করতো, খেলতো, গাইতো, নাচতো আর যতসব উদ্ভট কাজ করতো। বইটি শুধু যে গল্প তা কিন্তু নয় প্রতিটি গল্পের শেষেই কিছু শিক্ষণীয় বিষয় এতো সহজ আর সুন্দর করে উল্লেখ করেছে যে ছোটরা পড়লেও বুঝবে না তাকে শেখানো হচ্ছে, কিন্তু সে শিখে যাচ্ছে। কারন এখানে সরাসরি তাকে বলা হচ্ছে বলা হচ্ছে গল্পের বাবাকে। বইটি ৩-৫ বছরের বাচ্চাদের পড়ে শোনাতে পারেন, বেশ মজা পাবে। আর ৬-১৩ বছরের কিশোর-কিশোরীরা নিজের আনন্দেই পড়বে। বইটির অনুবাদ খুবই চমৎকার, বানান ভুল নেই, শুধু নাম ছাড়া মোটামুটি সব বাংলার আদলে লেখা ফলে পড়তে অনেক আরাম পাওয়া যাবে। বইটাতে চমৎকার কিছু প্রবাদ আছে - "বাজে কাজে ১ঘণ্টা, আসল কাজে গোটা মনটা" "কাজ আঁতকায় ওস্তাদ দেখে, আর আলসে আঁতকায় কাজ দেখে"
আদরের ছেলেমেয়রা এই বইয়ের জন্মকথাটা বলি শোনো। আমার এক মেয়ে আছে সাশা। এখন অবশ্য দিব্যি বড়সড়ো হয়ে উঠেছে সে, নিজেই বলে, ‘আমি যখন ছোট্ট ছিলাম...’ তা এই সাশা যখন ছিল একেবারেই ছোট্র তখন ভারি ভুগত সে। কখনো ইনফ্লুয়েঞ্জা, কখনো টনসিলাইটিস। তারপর কানের ব্যথা । তোমাদের যদি কখনো কান কটকট রোগ হয়ে থাকে, তাহলে নিজেরাই বুঝবে সে কী যন্ত্রণা। আর যদি না হয়ে থাকে, তাহলে বুঝিয়ে বলা বৃথা, কেননা সে বোঝানো অসম্ভব । একবার সাশার কানের যন্ত্রণা খুব বাড়ল, সারা দিন-রাত সে কাঁদল, ঘুমোতে পারছিল না। আমার এত কষ্ট লাগছিল যেনিজেরই প্রায় কান্না এসে গিয়েছিল। নানা রকম বই পড়ে শোনাচ্ছিলাম আমি, নয়ত মজার মজার গল্প বলছিলাম। বলছিলাম ছোটাবেলায় কী রকম ছিলাম আমি, নতুন বল ছুড়ে দিয়েছিলাম মোটর গাড়ির নিচে । গল্পটা সাশার ভারি ভালো লাগল। ভারি ভালো লাগল যে তার বাবাও একদিন ছোট্র ছিল, দুষ্টুমি করত, কথা শুনত না, শাস্তি পেত। কথাটা মনে ধরল তার। তারপর থেকে যেই কান কটকট করত অমনি সাশা ডাকত,‘বাবা,বাবা, শিগগির!কান কটকট করছে, বলো না ছোটবেলায় তুমি কী করতে!’। আর ওকে যেসব কথা শুনিয়েছিলাম সেগুলোই তোমরা এখন পড়বে।
সূচি বাবা যখন ছোটো রঙিন বলা-১৩ পোষ মানানো-১৭ পদ্য রচনা-২১ প্রফেসরকে কামড়-২৫ পেশা বাছাই-২৯ বাজনা শেখা-৩৩ রুটি ছোড়া-৩৭ বাবার রাগ-8০ বাবার ভুল-৪৪ লেখা শেখা-8৭ ভাইকে ফেলে চম্পট-৫০ বাবার সই-৫৩ শক্তি পরীক্ষা-৫৬ স্কুল যাত্রা-৬০
ইশকুলে বাবা লেট লতিফ -৬৫ বাবার সিনেমা দেখা-৭০ জ্বালাতন-৭৪ বাবার বাঘ শিকার-৭৭ ছবি আঁকা-৮১ মিথ্যে কথা-৮৪ ট্রাম থামানো-৮৮ সাপ মারা-৯৩ জার্মান ভাষার ওপর প্রতিশোধ-৯৮ দুটি রচনা-১০২ মায়াকোভস্কির সঙ্গে আলাপ-১০৬ আবৃত্তি-১১০ পিঙ-পঙ খেলা-১১৬ টুল বানানো-১২৩
ননী ভৌমিক ১৯২১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন।ননী ভৌমিকের বাড়ি বর্তমান বাংলাদেশের রংপুর। রংপুর শহরে স্কুলে পড়তেন। রংপুর কলেজে থেকে আই.এসসি ও পাবনা সরকারি কলেজ থেকে বি.এসসি পাস করেন। অর্থাভাবে এম.এসসি পড়তে পারেননি। পরে বীরভূম জেলার সিউড়িতে চলে আসেন। বীরভূম ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী বিপ্লবী নিত্যনারায়ন ভৌমিক তার দাদা ।ননী ভৌমিক তরুণ বয়েসেই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং স্বাধীনতা পত্রিকায় সাংবাদিকের কাজ করতে শুরু করেন। ৪৬ সালের ভয়াবহ দাঙ্গার ভেতরেও নির্ভীকভাবে সংবাদ সংগ্রহ করে গেছেন তিনি। পরে তেভাগা আন্দোলনের খবর জোগাড় করেছেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে যা স্বাধীনতা পত্রিকায় প্রকাশিত হত। তার এই অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ছোটগল্প সংকলন 'ধানকানা'বের হয়। অরণি পত্রিকায় নিজের সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। চৈত্রদিন তার অপর গ্রন্থ। ফ্যাসিবিরোধী প্রগতি লেখক সংঘ ও ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির সদস্য ছিলেন। পরিচয় পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন কিছুকাল। তার বিখ্যাত উপন্যাস ধুলোমাটি ধারাবাহিকভাবে পরিচয়ে বের হয়। ১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলে তিনি গ্রেপ্তার হন ও প্রেসিডেন্সি, বক্সা ইত্যাদি জেলে আটক থাকেন। ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি তিনি মস্কোর প্রগতি প্রকাশনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অনুবাদকের কাজ নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়া যান। রুশ মহিলা স্বেতলানা'কে বিয়ে করে সে দেশেই থেকে যান। বহু রুশ সাহিত্যের অসামান্য বাংলা অনুবাদ তার হাত দিয়ে বেরিয়েছে। রাজনৈতিক সাহিত্য ছাড়াও অজস্র শিশু কিশোরদের গল্প, উপন্যাস অনুবাদ করেছেন। ফিওদোর দস্তয়েভ্স্কির বঞ্চিত লাঞ্ছিত, জন রীডের দুনিয়া কাঁপানো দশদিন, ল্যেভ তল্স্তোয়ের আনা কারেনিনা ইত্যাদি ছাড়াও বাংলা- রুশ- বাংলা অভিধান, ইউক্রেনের গল্প, সোনার চাবি, উভচর মানব ইত্যাদি। তবে অনুবাদের কাজ করতে গিয়ে নিজের মৌলিক লেখার কাজ ব্যহত হয়। সোভিয়েত মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমন করে রিপোর্টাজ ধর্মী 'মরু ও মঞ্জরী' গ্রন্থটি লেখেন সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে। তার সাহিত্যকর্মের জন্যে বঙ্কিম পুরষ্কার ও ১৯৮৮ সালে বিদ্যাসাগর-স্মৃতি পুরষ্কার দেওয়া হয় তাকে। ননী ভৌমিকের শেষ জীবন অবহেলা আর আর্থিক সমস্যায় কাটে। পুত্রের মৃত্যুতে মানসিক আঘাত ও স্মৃতিভ্রংশে ভুগতেন। ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৬ সালে তিনি রাশিয়াতেই পথ দুর্ঘটনায় মারা যান।