১.১ চীনের ইতিহাসে আধুনিক যুগের সূত্রপাত চীনের ইতিহাসে আধুনিক যুগের সূত্রপাত কবে থেকে, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। পুরাতনপন্থী ঐতিহ্যগত চৈনিক ঐতিহাসিকেরা অর্থাৎ শিয়াও-ই-শান, চিং-তাই-তুং-শি প্রভৃতি ঐতিহাসিকেরা মনে করেন মিং যুগের (১৩৬৮-১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দ) অবসান এবং চিং যুগের (১৬৪৪-১৯১১ খ্রিস্টাব্দ) প্রতিষ্ঠার সময়ের সন্ধিক্ষণে চীনের ইতিহাসে আধুনিক যুগের আরম্ভ। তাঁদের বক্তব্যের সমর্থনে তাঁরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, এই সময় থেকেই ইউরোপীয় মিশনারি এবং ভ্রমণকারীরা চীনদেশে আসতে আরম্ভ করেছিলেন এবং তখন থেকেই চীনের সাথে পাশ্চাত্য দুনিয়ার যোগাযোগের শুরু। ১৬৪৩-৪৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ অভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে চীনে মাঞ্চুদের উত্থান এবং চিং রাজবংশের প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল এবং বাহ্যিক দিক দিয়ে তখন থেকেই চীনে পাশ্চাত্য শিক্ষার সূচনা ঘটেছিল। ফেয়ারব্যাঙ্ক, ভিনাক, ইম্যানুয়েল সু প্রভৃতি পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকেরা বলেছেন, প্রথম অহিফেন যুদ্ধের (১৮৩৯-১৮৪২ খ্রিস্টাব্দ) সময় থেকে চীনের আধুনিক যুগের সূচনা। কারণ এই যুদ্ধের ফলশ্রুতি হিসাবেই পাশ্চাত্য জগতের সাথে চীনের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটেছিল, যা পরবর্তীকালে চীনের ইতিহাসে কতকগুলি সুদূরপ্রসারী বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেছিল। মার্কস্বাদী ঐতিহাসিকেরা—জাঁ শ্যেনো, ইস্রায়েল এপ্স্টেইন, জিয়ান বোজান, মারিয়ানে বাস্তিদ, হু হুয়া প্রভৃতি ঐতিহাসিকও প্রথম অহিফেন যুদ্ধকে আধুনিক চীনের সূচনারেখা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন—এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চীনে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল এবং অহিফেন যুদ্ধ- পরবর্তী চীনের ইতিহাস মূলত সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠনের ইতিহাস। এই সময় থেকেই পাশ্চাত্য পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের কুফলগুলি চীনে প্রতিফলিত হতে আরম্ভ করে। সামন্ততান্ত্রিক চীন আধা-সামন্ততান্ত্রিক আধা-ঔপনিবেশিক (Semi-feudal Semi-colonial) চীনে পরিণত হয়। চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও চীনের ইতিহাসের মূল্যায়নের সময় একই কারণে ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধকে আধুনিক যুগের সূত্রপাতের সময় হিসাবে চিহ্নিত করেছিল।