দক্ষিণবঙ্গের মনসামঙ্গলকারদের মধ্যে কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ সম্ভবত সর্বপ্রাচীন ও সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। এঁর গ্রন্থই ঐ ধারার কবিদের ভিতর প্রথম মুদ্রণ-সৌভাগ্য লাভ করেছিল। সেটা ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে। সেই মুদ্রিত বইয়ের কপি রয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। এই কবির জনপ্রিয়তা ছিল যথেষ্ট, যার ফলে সারা বঙ্গদেশে এঁর অনেক পুথি মিলেছে। সব অনুলিপি যে পুরাে গ্রন্থের তাও নয়। এক একজন লিপিকর এক একটি পালার অনুলিপি বানিয়েছেন। গােটা বইয়ের সংখ্যা কম। বিচ্ছিন্ন পালাগুলি জনসমাজে সম্ভবত বেশি পরিচিতি পেয়েছিল। এর প্রমাণ পাওয়া যায় বটতলার যুগের প্রকাশনায়। মনসার ভাসান’ নাম দিয়ে মুদ্রালোভী প্রকাশকরা (যেমন মধুসূদন শীল কিংবা গৌরচরণ পাল) পুথির প্রামাণিকতা ও গুণমান বিচার না করে যথেচ্ছ ছাপিয়ে গিয়েছেন। এইসব মুদ্রিত গ্রন্থ উনিশ শতকের তৃতীয় পাদে বেশ সচল ছিল। তখনও অন্য কোনাে মনসামঙ্গল কাব্যের নাম বাঙালি পাঠকের নজরে সেভাবে আসেনি। এ ঘটনার প্রতিফলন লক্ষ করা যায় বাংলা সাহিত্যের প্রথম ইতিহাসগ্রন্থ বলে কথিত রামগতি ন্যায়রত্নের বাঙ্গালা ভাষা ও বাঙ্গালা সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব’ নামক গ্রন্থে। ন্যায়রত্ন মশাই ওই ধারার মধ্যে কেবল ক্ষেমানন্দেরই নাম উল্লেখ করেছিলেন।