রামমোহন রায় যে রেনেসাঁসের সূচনা করেছিলেন তারই অখণ্ড চিন্তাসূত্রের বঙ্কিমচন্দ্ৰ ছিলেন একটি অন্যতম মূলস্তম্ভ। বঙ্কিমচন্দ্র ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের রেনেসাঁসের ‘ক্ষীরটুকু’ নিয়ে বাংলার রেনেসাঁস ঘটালেন এবং এই রেনেসাঁসে অবশ্যই মৌলিকতা ছিল। তিনি মনস্থির করে নিয়েছিলেন, সাহিত্য সৃষ্টির—উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে বাংলার স্থবিরতা সচল করবেন, বাঙালিকে যুক্তিবাদী করবেন, বাঙালির চিন্তা জগতের | পরিবর্তন আনবেন। এই লক্ষ্যে বঙ্কিম আমাদের দেশের গৌরবময় অতীতকে পুনরুজ্জীবিত করলেন তাঁর প্রবন্ধে ও উপন্যাসের পৃষ্ঠায়। যে সমাজে মানুষের বড় হয়ে ওঠার ভিত্তি সুগঠিত হয় সেই সমাজকেই | তিনি তুলে ধরলেন মানবতাবাদী (Humanist) দৃষ্টিকোণ থেকে। তাঁর প্রবর্তিত ধর্ম ‘মানবধর্ম' (Humanism)। তাঁর দর্শন ভাবনার ভিত্তি সুগঠিত হয়েছিল ইউরোপীয় দার্শনিকদের দ্বারা। স্ত্রী শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করে তিনি শিক্ষা চিন্তায় প্রগতিশীল মনের পরিচয় | দিলেন। পুরাণ তাঁর হাতে নতুন মাত্রা পেল। | তিনি পুরাণের প্রক্ষিপ্ত অংশ চিহ্নিত করে সঠিক পুরাণ পাঠকের হাতে তুলে দিলেন। এ দিক থেকে তিনি Humanist এবং এরই প্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ও | ফ্রান্সের রেনেসাঁস থেকে। এই সমস্ত বিষয় নিয়েই লেখক ‘উনিশ শতকে বাংলা রেনেসাঁস ও বঙ্কিমচন্দ্র' দুই মলাটে ধরলেন। গ্রন্থটি আজকের দিনে অবশ্য প্রাসঙ্গিক।