‘সময়-স্বভাব থেকে সময়ের ভাষা নতুন ভাবে নিড়ে নিই যখন, আমাদের পাঠ-প্রকরণও একটু একটু করে বদলে যায়। অন্য প্রজন্মের কবিতা পুনঃপাঠ করতে গিয়ে বুঝি, নতুন তাৎপর্যের উপকূলরেখা জেগে উঠছে”। বাংলা কবিতার সামগ্রিক পরিচয় ও তার অন্তর্নিহিত আবেদনকে আত্মস্থ করতে হলে একান্ত জরুরি হয়ে ওঠে বিচক্ষণ ব্যক্তির মেধাবী বিশ্লেষণ ও মতামত। বাংলা প্রবন্ধ ও সমালোচনা সাহিত্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য কাজ করছেন, তাঁদেরই অন্যতম তপোধীর ভট্টাচার্য। বাংলা কবিতার ইতিহাস, হালহকিকত এবং বিবর্তন সম্পর্কে জানতে হলে মনস্ক পাঠকের কাছে অবশ্যপাঠ্য হিসেবে গ্রাহ্য হয়ে এসেছে তপোধীর ভট্টাচার্যের প্রবন্ধাবলি। এই সময়ের বাংলা ভাষাভাষী পাঠক বিশেষভাবে ঋণী থাকছেন তাঁর কাছে। ‘কবিতার বহুস্বর' গ্রন্থটিতে রয়েছে অমিয় চক্রবর্তী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শামসুর রাহমানদের মতো বিশিষ্ট কবিদের কবিতা সম্পর্কে লেখকের উপলব্ধিগত বিশ্লেষণ । বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছেন কবি উৎপলকুমার বসু, কবি রুচিরা শ্যাম । একইভাবে এই গ্রন্থেই রয়েছে লেখকের ‘কবিতার নন্দন, বহুস্বর ও সময়’, ‘কবিতার সময় সময়ের কবিতা’, ‘আমাদের কবিতা ওদের আধুনিকতা' শিরোনামে লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধগুলি। মনস্ক পাঠকের কাছে গ্রন্থটি অবশ্যই সংরক্ষণযোগ্য হয়ে উঠবে।
এ-সময়ের পুরোধা সাহিত্যিতাত্তিক ও সমালোচক তপোধীর ভট্টাচার্য (জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯) বাংলা সাহিত্যের যশস্বী চিন্তাবিদ। বাঙালির নিজস্ব নন্দনতত্ত্ব হিসেবে উত্তর আধুনিক চেতনার অন্যতম প্রস্তাবক তিনি। এখনও পর্যন্ত তাঁর ১৩৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘তুমি সেই পীড়িত কুসুম’ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। মোট ৩২ টি কবিতা-সংকলন তাঁর রয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কার্যদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এছাড়া দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাবান রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করছেন। ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এমেরিটাস অধ্যাপকও। নিরন্তর মনন-চৰ্চা করাই তাঁর জীবনের ব্রত। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : প্রতীচ্যের সাহিত্যতত্ত্ব, ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণ, আধুনিকতা : পর্ব থেকে পর্বান্তর, বাখতিন তত্ত্ব ও প্রয়োগ, ছোটগল্পের সুলুক-সন্ধান, উপন্যাসের সময়, উপন্যাসের বিনির্মাণ, কবিতার রূপান্তর, কবিতা : নন্দন ও সময় প্রভৃতি।