ভূমিকা বাংলায় বিজ্ঞান সাধনা করে গেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্ৰনাথ বসু, জগদীশচন্দ্র বসু প্রমুখ স্বনামধন্য দিকপাল মনীষীরা। মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তাঁদের চেষ্টা ছিল সীমাহীন। তাঁদের স্মরণ করেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমাদের দেশে এমন বহু বৃক্ষ, গুল্ম এবং বিরুৎ শ্রেণীর উদ্ভিদ রয়েছে যাদের গুণাগুণ অপরিসীম। কিন্তু সে-সবের যথাযথ পরিচয় ও ব্যবহার পদ্ধতি জানা না থাকায় আমরা ঠিকমত তাদের কাজে লাগাতে পারি না, জংলী গাছ হিসাবেই আমাদের কাছে তাদের পরিচয় । যার সাহায্যে রোগের ভয় বা রোগকে জয় করা যায় তাকেই ভেষজ বলা হয়। এতে ভেষজ কথার অর্থ ব্যাপক হলেও সাধারণ ভাবে ঔষধিকেই ভেষজ শব্দে সম্বোধন করা হয়। রোগ ভয়কে জয় করার জন্য অতি প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ উদ্ভিদের সাহায্য নিয়ে রোগমুক্তির উপায় অন্বেষণ করেছে; আবার এও বলা যায় যে, বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহারের উপযোগী উদ্ভিদই হল ভেষজ উদ্ভিদ। একদিন ছিল যখন মানুষ তার রোগ আরোগ্য এই উদ্ভিদকেই বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছিল। লক্ষণকে বাঁচাতে স্বয়ং হনুমান নির্দিষ্ট গুল্মটির সন্ধান না পেয়ে গন্ধমাদন পর্বতকেই তুলে এনেছিলেন। আমাদের প্রাচীন চরক সংহিতায় বহু উদ্ভিদের মধ্যে নানা রোগের ঔষধের গুণাগুণ থাকার কথা আমরা জানতে পারি। চরক সংহিতায় ৫৪২টি এবং সুশ্রুত সংহিতায় ৭৫০টি ভেষজ উদ্ভিদের উল্লেখ পাওয়া যায়। আর মেলে মোট ১১২০টি রোগের বিবরণ। প্রকৃতি তার অকৃপণ হাতে ভারতবর্ষকে জৈব বৈচিত্র্যের প্রাচুর্যে ধনী করেছে। ভারতে পাওয়া উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ হাজার, উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, ভারতবর্ষে প্রায় ৩৫০০ থেকে ৫০০০-এর মতো উদ্ভিদের গুণাগুণ ও ব্যবহার সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া গেছে। ভারতে ভেষজ উদ্ভিদের শতকরা ৭০ ভাগ জন্মায় অরণ্যভূমিতে। ছড়িয়ে আছে পশ্চিম ও পূর্বঘাট পর্বত, বিন্ধ্য পর্বত, ছোটনাগপুরের মালভূমি, আরাবল্লী পর্বত, হিমালয় পর্বতের পাদদেশে তরাই অঞ্চল, উত্তরপূর্ব অঞ্চল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। আর শতকরা ৩০ ভাগ পাওয়া যায় উচ্চভূমিতে। দেশের ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদার একটা বড় অংশ মেটায় হিমাচল প্রদেশের অরণ্যভূমি। নানা কারণে এই বিশাল ভেষজ উদ্ভিদের ভাণ্ডার আজ বিপন্ন অবস্থায় পৌঁছেছে। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই ২২০টি ভেষজ উদ্ভিদ প্রজাতিকে বিপদগ্রস্ত বা বিপন্ন বলে অভিহিত করেছে।