রবীন্দ্রনাথ রীতিমতো কোনো নাট্যশাস্ত্র রচনা করেননি। তবু বেশ অল্প বয়সেই নাটক সম্বন্ধে একটা স্বচ্ছ ধারণা গড়ে ওঠে তাঁর মনে। ‘ভগ্নহৃদয়' নাটকের আদলে লেখা হলেও ওই ‘গীতি-কাব্য’-টি যে নাটক নয়, তা কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় বলে দেন। তাঁর মতে, ‘নাটক ফুলের গাছ। তাহাতে ফুল ফুটে বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে মূল, কাণ্ড, শাখা, পত্র এমনকি কাঁটাটি পর্যন্ত থাকা চাই।' অর্থাৎ জীবনের মনোরম কোমল অংশই শুধু নয়, তার তিক্ত, শুষ্ক, নীল ভাগ-ও নাট্যশরীরে অঙ্গীভূত হয়ে যায় । এমনকি দর্শকের সঙ্গে নাট্যকারের সম্পর্ক কেমন হবে, সে- বিষয়ে সচেতন ছিলেন, “কতক তুমি বোঝাইবে, কতক তাহারা বুঝিবে, তোমাদের সহিত তাহাদের এইরূপ আপসের সম্বন্ধ।' তাঁর নাট্যচিন্তা অবিকল এক থাকেনি কখনও। নাট্যকাণ্ড সহজ- সরল করার পক্ষপাতী ছিলেন বলেই তিনি চিত্রপটের বদলে ‘চিত্তপট'-এর ওপর জোর দেন, সেজন্য দৃশ্যপটের গুরুত্ব তাঁর কাছে হ্রাস পেতে থাকে, আর দৃশ্যপট ঘোচানোর সংকল্প তাঁকে অস্থির করে দিতে থাকে। সংগীত ছিল তাঁর নাটকের এক মস্ত বাহন, কিন্তু তাতেই তিনি সুস্থির থাকতে পারছিলেন না, মঞ্চের দৃষ্টিগ্রাহ্য শূন্যতা ভরাট করার জন্য তিনি অবলম্বন করলেন দেহের রেখায়িত ছন্দ অর্থাৎ নৃত্য তাঁর নাটকে। তাঁর নাট্যরচনা শুরু হয় গীতিনাট্যে, শেষ হয় নৃত্যনাট্যে । রবীন্দ্রনাথ নাটক, রঙ্গমঞ্চ, অভিনয়—গোটা ব্যাপারটাকে কবজা করতে চাইছিলেন একসঙ্গে, তাই তিনি অনন্য হয়ে ওঠেন নাটকের ভুবনেও।