আমার সাহিত্য জীবন -বইয়ের ফ্ল্যাপের লিখা কথা নিজের জীবনকালের কথায় নিজের জীবনকে গৌন করে কালকে বড়ো করে শৈশবের কথা এবং কৈশোরের কথা লিখে সাহিত্য-জীবনের কথা লেখার সংকল্প যখন করেছিল... See more
TK. 504
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
আমার সাহিত্য জীবন -বইয়ের ফ্ল্যাপের লিখা কথা নিজের জীবনকালের কথায় নিজের জীবনকে গৌন করে কালকে বড়ো করে শৈশবের কথা এবং কৈশোরের কথা লিখে সাহিত্য-জীবনের কথা লেখার সংকল্প যখন করেছিলাম তখন এ কাজ যে কত কঠিন তা ভেবে দেখিনি। লিখতে বসে মনে হচ্ছে এমন কঠিন কাজে হাত না দেওয়াই ভালো ছিল। সহজাত লিখনক্ষমতায় এমন কঠিন কাজকে সহজ করে তুলেছেন তিনি। উম্মোচিত হয়েছে তাঁর সৃজনজীবনের অন্দরমহল। সেই সঙ্গে, বিগত শতকের তিরিশের দশকের শুরু থেকে পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ-আমাদের জাতীয় জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়পর্বকে চিনে নেবার আয়াসেও সহযোগ দান করে এই আত্মচরিতমূলক গদ্য।
...............আমার সাহিত্য জীবন -বইয়ের নিবেদন............... বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষে ১৯৯৭ সালে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ আমার সাহিত্য-জীবন-এর আকাদেমি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। এই গ্রন্থটির প্রথম পর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৩ সালে এবং দ্বিতীয় পর্ব ১৯৬২ সালে। আকাদেমি সংস্করণে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব একত্রে গ্রন্থাবদ্ধ হয়েছিল। গ্রন্থদুটি তারাশঙ্করপুত্ৰ সরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে পাওয়া গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি এবং তারাশঙ্কর স্মারক সমিতির সমন্বিত উদ্যোগে তারাশঙ্কর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের যে-বর্ষব্যাপী কর্মসূচি গৃহীত হয়েছিল তারই অঙ্গ হিসাবে আমার সাহিত্য-জীবন-এর আকাদেমি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। তারাশঙ্কর স্মারক সমিতির সম্পাদক সবিতেন্দ্ৰনাথ রায়ও সহায়তা দান করেছিলেন। কথাকার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু তার সারস্বতসাধনার দিনগুলির বৃত্তান্তই উন্মোচন করেননি, তার গদ্যে একটি যুগের আলেখ্যও প্রাণময় হয়ে উঠেছে। বিগত শতকের তিরিশের দশক থেকে পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ-আমাদের জাতীয় জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়পর্ব বিষয়ে ধারণা নির্মাণে এ-গ্রন্থ বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠে। সুতরাং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ একজন কথাকারের সৃজনজীবনের অন্দরে প্রবেশের জন্য শুধু নয়, একটি যুগকে চিনে নেবার আয়াসে সহযোগ দান করে এই আত্মচরিতমূলক গদ্য। গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ একবছরকাল আগে নিঃশেষিত হয়েছিল। বর্তমান সংস্করণে কিছু সংশোধনের সুযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ-বিষয়ে আমাদের সহায়তা করেছেন তারাশঙ্করের পৌত্র অমলাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। বর্তমান সংস্করণে সংযুক্ত হল আকাদেমি অভিলেখাগারে সংরক্ষিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাণ্ডুলিপির কয়েকটি পৃষ্ঠার অনুলিপি। আকাদেমির প্রকাশনা বিভাগ ও অভিলেখাগারের যেসকল কর্মী গ্রন্থটি প্রকাশের জন্য পরিশ্রম করেছেন তাদেরকেও অভিনন্দন জানাই।
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ছিলেন। ১৮৯৮ সালের ২৪ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় তাঁর জন্ম। তাঁর শৈশব কাটে এই বীরভূম জেলারই লাভপুর গ্রামে। ধর্মপরায়ণ ও আদর্শনিষ্ঠ বাবা-মায়ের কাছে তিনিও একই সততা ও আদর্শের শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকেন। লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। তবে নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম শেষ করতে পারেননি। ভারতীয় স্বাধীনতা বিপ্লবের সময় রাজনৈতিক কারণে কারাভোগ করতে হয় তাঁর। মুক্তি পাওয়ার পর সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন পুরোপুরি। তাঁর অনন্য প্রতিভায় জন্ম নিয়েছে একেকটি অসাধারণ পাঠকনন্দিত সাহিত্যকর্ম। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় রচনাবলী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সমৃদ্ধ সম্পদ। তাঁর লেখা কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের জীবনকে এককভাবে উপস্থাপন করে না, ফুটিয়ে তোলে গ্রামীণ ও নাগরিক জীবনের সব বৈশিষ্ট্যকে। সাহিত্য সৃষ্টি করতে তিনি বাদ রাখেননি কোনো শাখা। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হলো ‘চৈতালি ঘূর্ণি (১৯৩২)’, ‘পাষাণপুরী (১৯৩৩)’, ’ধাত্রীদেবতা (১৯৩৯)’, ’কালিন্দী (১৯৪০)’, ’কবি (১৯৪৪)’, ’হাসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৫১)’, ‘কালরাত্রি (১৯৭০)’ ইত্যাদি। তারাশঙ্করের উপন্যাস সমগ্র সংখ্যার হিসাবে প্রায় ৬৫টি। এর মধ্যে ‘কবি’ উপন্যাসটি তারাশঙ্করের কালজয়ী উপন্যাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামার মাঝে তিনি বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী ও সাহিত্য সম্মেলন এর নেতৃত্ব দান ও সভাপতিত্ব করেন। পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে তিনি আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় কবিতা সমগ্র হল ‘ত্রিপত্র (১৯২৬)। এছাড়াও সাহিত্য রচনা করেছেন ছোটগল্প, নাটক, প্রহসন ও প্রবন্ধ আকারেও। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের ছোটগল্প সংকলন হলো ‘ছলনাময়ী (১৯৩৭)’, ‘রসকলি (১৯৩৯)’, ‘হারানো সুর (১৯৪৫)’, ‘কালান্তর (১৯৫৬), ‘মিছিল (১৯৬৯)’, ‘উনিশশো একাত্তর (১৯৭১)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত অনেক উপন্যাস পেয়েছে চলচ্চিত্র রূপ, এদের মাঝে আছে ‘কালিন্দী’, ‘দুই পুরুষ’, ‘জলসাঘর’, ‘অভিযান’। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় উপন্যাস সমগ্র বাঙালি পাঠকের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘শরতস্মৃতি পুরস্কার (১৯৪৭)’, ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৫৬)’, ‘রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫৫)’, ‘পদ্মশ্রী (১৯৬২)’, ‘পদ্মভূষণ (১৯৬৮)’ ইত্যাদি পুরস্কার ও উপাধি লাভ করেন। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় এর বই সমূহ মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্থান করে নিয়েছে। পাঠকনন্দিত এই বাঙালি কথাসাহিত্যিক ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পরলোকগমন করেন।