“হে আমার ছেলে" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ জগদ্বিখ্যাত এক মহান দার্শনিক ও সাধকের নাম শায়খ আলী। আত-তানতাভী রহ. আজীবন তিনি জ্ঞানের আলাে বিতরণে নিমগ্ন ছিলেন তার লেখনী ও আলােচনায় বহু দিশাহীন উদ্ধান্ত বিনয় শ্রদ্ধায় নমিত তাদের ভেতরটা থাকে এমনই জোছনা পেয়েছে সঠিক পথের দিশা। হৃদয় যাদের বিশ্বাসের আলােয় উদ্ভাসিত; অন্তর তাদের নবী সাহাবী ও পূর্বসূরি মনীষীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় নমিত। তাদের ভেতরটা থাকে এমনই জোছনা ছড়ানাে! ইলমের প্রতি তাঁর ছিল মথিত আবেগ। জাতির জন্য ছিল অফুরান টান। এই আবেগ আর টানের এক অপূর্ব মিশেল ঘটেছে হে আমার ছেলে” গ্রন্থে। বক্ষ্যমাণ বইটির মূল বিষয়বস্তু হলাে যৌবনের উন্মাদনায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় এক যুবকের প্রতি প্রজ্ঞাবান একজন আলেমের মহামূল্যবান পরামর্শ । যৌবনের তাড়নায় বেসামাল এক যুবক চারদিকে যখন হারামের হাতছানি দেখছিল, তখন ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। নিজেকে হারাম থেকে সংযত রাখাও হয়ে উঠছিল দুঃসাধ্য। এমন সময় কাগজ-কলম হাতে তুলে নিয়ে নিজের বেসামাল উদ্দীপনার কথা লিখে পাঠিয়ে দিল ড. আলী তানতাভী’র কাছে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আকড়, ইসলামী শরীয়তের প্রজ্ঞাবান আলেম ড. আলী তানতাবী সেই চিঠি পড়লেন। অতঃপর তিনি নিজের দুরদর্শিতা আর প্রজ্ঞার সাহায্যে, শরীয়তের দিক নির্দেশনার আলােকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সেই চিঠির উত্তর লিখলেন । নসীহত করলেন সেই যুবককে; অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায়। এতে একজন দরদী অভিভাবকের সুরেই তিনি জাগাতে চেষ্টা করেছেন যুবসমাজকে।
বিংশ শতাব্দীর এক সমাজচিন্তক দার্শনিক ড. শায়খ আলী তানতাবী। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেশক নগরীতে তাঁর জন্ম। পৈত্রিক আবাস মিসরের তানতা শহর হওয়ায় তানতাবী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ছাত্রজীবনেই তুখােড় মেধার কারণে তিনি গবেষক শিক্ষকগণের দৃষ্টি কাড়েন। সেকালে গবেষণা ও জ্ঞানসাধনায় তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ঈর্ষণীয়। সেই পরিবারেই তিনি ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করে ঐতিহ্যের তিলকে সােনার প্রলেপ আঁটেন। সতেরাে বছর বয়স। থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প প্রকাশ হতে থাকে। ১৯৩৬ সালে সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ইরাক গমন করেন। সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পর দামেশকে ফিরে এসে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে যােগ্যতার সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। আর লেখালেখি! সে তাে তার নেশা। এ নেশা তার মজ্জার সাথে মিশা। একটু সময় পেলেই এ চিন্তাবিদ কাগজ কলম হাতে লিখতে বসে যেতেন। তাঁর জ্ঞানের নিগুঢ় চশমায় ধরা পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা অসঙ্গতির কালাে পাহাড়। সেই অমানিশা দূর করতে তিনি। জ্বালান নানান রঙের জ্ঞানের মশাল। সেই আলােয় বিদুরিত হয় শত প্রকারের। আঁধার-অজ্ঞানতা; সম্বিৎ ফিরে পায়। হতাশাচ্ছন্ন জাতি। গবেষণামূলক লেখালেখির খ্যাতির মধ্য দিয়ে তিনি মক্কা মােকাররমা শরিয়া কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধানমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখা, বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ প্রণয়ন আর বিভিন্ন মাদরাসা-কলেজে দরসদানও চলতে থাকে সমান গতিতে। ১৯৯৯ সালে ৯০ বছর বয়সে এ শায়খ মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন।