ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সর্বকালের বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জন। যতদিন বাঙালি থাকবে, বাঙালি চেতনা থাকবে এ স্বাধীনতা ও গৌরব হারিয়ে যাবে না। এ গৌরব গাঁথার বর্ণনা চিরদিন চলবে, বাঙালির প্রতিক্ষণের বাংলার প্রতি ধুলি কণার সাথে মিশে আছ তা। আরও উজ্জ্বল্য এবং আরও সমৃদ্ধি পেয়ে বিশ্বসভায় বিশ্বমানসে স্থান করে নেবে এবং যুগে যুগে বাঙালির চিত্তে সঞ্চীবন সুস্থ আস্বাদন পেয়ে এ বীরত্ব-দর্পণকে মহিমাময় করে তুলবে।
তবে মাত্র নয় মাসের সফল নয় এ মুক্তিযুদ্ধ। যদিও এ সময়ে ত্রিশ লক্ষ বাঙালির প্রাণ উৎসর্গ, তিন লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত, মুক্তিযোদ্ধাদের সবিক্রম যুদ্ধাগ্রহ এবং দেশের মানুষের অবিরাম মুক্তি আকাঙ্খা ছিল এর জন্য দায়ী। কিন্তু হাজার বছর ধরে বাঙালি পরাধীনতার গ্লানি পেয়েছে, বিদেশি শাসন পীড়ন অত্যাচার সয়েছে এবং সর্বশেষ পাকিস্তানি আধিপাত্য ও শোষন অত্যাচারের দরুণ অনির্বার্য এর সুত্রপাত ও লক্ষ্য অর্জনে এ পরিনাম।
দুঃখের বিষয় যে কুর পাকিস্তানিদের পরাজিত করে এ বিরাট অর্জ, অথচ সেই পাকিস্তানিরা ও পাকিস্তানিমনারা অগোচরে স্বাধীনতার পরেও বাঙালির ভেতর বিরাজ করছিল, তারা পরাজয় সহ্য করতে পারেনি। গোপনে ষড়যন্ত্র করে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতার নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিলুপ্ত করে এবং পাকিস্তানি কায়দায় বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা সৃষ্টি করে ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের পূণর্বাসিত করে, তাদের ক্ষমতা দিয়ে বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করে। পক্ষান্তরে তারা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে থাকে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, স্বৈরতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা, সকল রকম হত্যাকান্ডকে ইনডেমনিটি বিল দিয়ে জায়েজ করে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে। মুক্তিযু্দ্ধকে বিকৃত করে জাতির জনকের নাম এদেশ থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করে। দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর ধরে চলা এ বিভীষিকার অবসান ঘটে আরেক ডিসেম্বর ২০০৮ এসে জাতীয় মূল্যবোধকে পুনপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের এ গাঁথার ভেতর দৃষ্টিক্রম এ চিন্তা থেকে প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার এ প্রয়াস সঠিক তথ্য ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধার এ সংগ্রাম।
Shamsul Alam Sayed - (জন্ম ১৯৪০)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. এবং বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন থেকে পিএইচডি করেন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা শেষে এখন অবসর এবং লেখালেখিতে; তবে শয্যাগ্রস্ত হয়ে স্থবির হয়েছেন। এ যাবৎ প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ : চর্যাপদ : তাত্ত্বিক সমীক্ষা, উপন্যাসে জীবনবোধ ও মূল্যবোধ, হাফিজ ও বিস্ময়কর দিওয়ান, ওমর খৈয়াম, রবীন্দ্রনাথের মুসলমান চিন্তা ইত্যাদি।