"স্মৃতি অম্লান ১৯৭১" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: একাত্তরে আমাদের মুক্তিযােদ্ধারা যেমন দেশের ভেতরে সাহসের সঙ্গে শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তেমনি এ যুদ্ধের আরেকটি ফ্রন্ট ছিল বিদেশে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলােতে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক কূটনৈতিক লড়াই লড়তে হয়েছিল আমাদের। সে লড়াইয়ের একজন অগ্রসেনানী ছিলেন বর্তমান গ্রন্থের লেখক আবুল মাল আবদুল মুহিত। যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় পক্ষত্যাগ করে তিনি ও তাঁর বাঙালি সহকর্মীরা এই লড়াইয়ে শরিক হন। লড়াই হিসেবে সেটাও কম কঠিন বা ঝুঁকিহীন ছিল না। এর জন্য দরকার হয়েছিল রাজনৈতিক সচেতনতা, বুদ্ধিমত্তা, দৃঢ় মনোবল ও অসম সাহসিকতার। পাকিস্তান ও তাদের পৃষ্ঠপোেষক দেশ এবং গােষ্ঠীগুলাের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের মােকাবিলা করে সেদিন তাদের বাংলাদেশে পাকিস্তানি জান্তার গণহত্যা ও বর্বরতার চিত্র তুলে ধরতে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ে কাজ করতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসে তাঁদের দিনযাপন ও। কর্মকাণ্ডের সে অভিজ্ঞতাই অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে, অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে ও প্রচুর তথ্যসহযােগে স্মৃতি অম্লান: ১৯৭১-এ তুলে ধরা হয়েছে। বইয়ের এ বর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণে যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন সম্পর্কেও লেখকের কিছু চিন্তা ও অভিজ্ঞতার কথা বর্ণিত হয়েছে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত লেখক, গবেষক, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, প্রশাসক, পরিবেশবিদ ও অর্থনীতিবিদ আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটের এক সম্ভান্ত পরিবারে ২৫ জানুয়ারি, ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোরে ছাত্র সংগঠন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৫ সালে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সর্বদলীয় কর্মপরিষদের আহবায়ক থাকাকালে কিছুদিন জেলেও ছিলেন। কর্মজীবনে পূর্ব পাকিস্তান এবং কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের প্রায় ১৩ বছর চাকরি করে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে অর্থনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবে নিযুক্তি পান ১৯৬৯ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ৩০ জুনে তিনি আনুগত্য পরিবর্তন করেন এবং মার্কিন কূটনৈতিক, শিক্ষামহল ও সংবাদমাধ্যমে প্রচারণায় ও জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৫ বছরের সরকারি চাকরির পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে স্বেচ্ছা অবসরে যান ১৯৮১ সালে । ১৯৮২ এবং ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন এবং ESCAP-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন গড়ে উঠে। প্রথমে ‘পরশ এবং পরে বাপা'-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশনেরও পরপর দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পেয়েছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব।