"বাঙলা ও বাঙালী" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ আলােচ্য গ্রন্থে লেখক বাঙালির কাছে বাঙলা ও বাঙালির অতীত পরিচয় তুলে ধরবার মহৎ প্রয়াসে নিরুত। এ গ্রন্থ পণ্ডিতদের জন্যে নয়, লেখাপড়া জানা আত্মজিজ্ঞাসু বাঙালির জন্যে। এই দেশের ও মানুষের উদ্ভব ও বিকাশ, ঐশ্বর্য ও দারিদ্র্য, গৌরব ও লজ্জা, শক্তি ও দুর্বলতা, সম্পদ ও সমস্যা, আনন্দ ও যন্ত্রণা, দোষ ও গুণ, ভয় ও ভরসা, প্রীতি ও ঘৃণা, দ্বেষ ও দ্বন্দ্ব, আশা ও নৈরাশ্য, আত্মপ্রত্যয় ও আত্মগ্লানি, আত্মসম্মানবোেধ ও আত্মরতি, আদর্শবাদ ও নীতিহীনতা, সুকৃতি ও দুষ্কৃতি, সগ্রাম ও পরবশ্যতা প্রভৃতির ইতিকথাই স্বদেশ ও স্বজাতির অন্তরঙ্গ পরিচয়ের তথা স্বরূপের অভিজ্ঞান। বাংলার রাঢ়-বরেন্দ্রই প্রাচীন। পূর্ব ও দক্ষিণ-বঙ্গ অর্বাচীন। রাঢ় ছিল অনুন্নত ও অজ্ঞাত। তাই বরেন্দ্র নিয়েই বাংলার ইতিহাসের শুরু। মানুষের আদি নিবাস ছিল সাইবেরিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। সেখান থেকেই নানা পথ ঘুরে আসে ভূমধ্যসাগরীয় দ্রাবিড়-নিগ্রো, সাইবেরীয় নর্ডিক-মােঙ্গল। এরাই অষ্ট্ৰীক, দ্রাবিড়, শামীয়, নিগ্রো, আর্য, তাতার, শক, হ্ন, কুশান, গ্রীক, মােঙ্গল, ভােটচীনা প্রভৃতি নামে পরিচিত। আমাদের গায়ে আর্য রক্ত সামান্য, নিগ্রো রক্ত কম নয়, তবে বেশি আছে। দ্রাবিড় ও মােঙ্গল রক্ত, অর্থাৎ আমাদেরই নিকট জ্ঞাতি হচ্ছে কোল, মুণ্ডা, সাঁওতাল, নাগা, কুকী, তিব্বতী, কাছাড়ী, অহােম প্রভৃতি।