‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) মহানবীর প্রথম বিশদ জীবনী’ বইয়ের সম্পকে কিছু কথাঃ সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বইটি ইবনে ইসহাককে ইতিহাসে অমরত্ব দিয়েছে। ইসলাম ধর্ম, এর মহানবী (সা.) এবং সে সময়ের আরবের ইতিহাস জানার জন্য সারা পৃথিবীর নিবেদিতপ্ৰাণ ধর্মানুসারী থেকে নিষ্ঠাবান গবেষক পর্যন্ত সবাই এ বইয়ের কাছে ফিরে ফিরে এসেছেন। অসংখ্য ধর্মীয় ও গবেষণাগ্রন্থের মধ্য দিয়ে নানা ভাষায় এ বইয়ের উদ্ধৃতি ও বিশ্লেষণ পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে। মহানবী (সা.) মৃত্যুর পর লেখা এটিই তাঁর প্রথম বিশদ জীবনী। কিন্তু বইটি আরও নানা কারণে অনন্য। ইবনে ইসহাকের জন্ম ৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর ৭২ বছর পরে। অর্থাৎ মহানবীর (সা.) মৃত্যুর এক শতাব্দীর কাছাকাছি কোনাে সময়ে তাঁর এই জীবনী রচিত হয়। ইসলামের অভু্যদয়ের ঘটনা তখনাে খুব দূরের নয়। আরবে মহানবীর (সা.) স্মৃতিও সজীব । ধৰ্মচর্চার অংশ হিসেবে তাে বটেই, জীবনচর্চার উপাদান হিসেবেও। মহানবীর (সা.) স্মৃতির উত্তরাধিকারীদেরও অনেকে গত হয়েছেন কি হননি। এই বিপুল সজীব স্মৃতি ছিল ইবনে ইসহাকের হাতের নাগালে । উপরন্তু ইতিহাস রচনায় ইবনে ইসহাকের দীক্ষা ছিল । ইতিহাসের কাহিনি পরিবেশনা ছিল তাদের পারিবারিক পেশা। তার দাদা ইয়াসার ছিলেন ধর্মবিশ্বাসে খ্রিষ্টান। থাকতেন। কুফায়। এক যুদ্ধাভিযানে প্রখ্যাত সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদের হাতে তিনি বন্দী হন। পরে ইসলাম ধর্ম বরণ করেন। ইয়াসারের তিন ছেলে মুসা, আবদুর রহমান ও ইসহাক পেশা হিসেবে হাদিস ও ইতিহাসের কাহিনি পরিবেশন করতেন। ইবনে ইসহাক এই ইসহাকেরই সন্তান। ইবনে ইসহাকও বাবা-চাচাদের মতো কালপঞ্জি সংগ্রহ ও পরিবেশনায় মন দেন। বেঁচে থাকতেই ইতিহাস রচনায় সুনাম অর্জন করেছিলেন। কিন্তু সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা) তাঁর পাণ্ডিত্য ও ইতিহাসচর্চার শ্রেষ্ঠতম কীর্তি। এ বইয়ে তথ্যের সজীবতা ও সংগ্রহের নিষ্ঠার সঙ্গে সুষমভাবে এসে মিশেছে। ইবনে ইসহাকের পাণ্ডিত্য ও ভাষার প্রাঞ্জলতা । ইবনে ইসহাকের সুবিখ্যাত এই বই হারিয়ে গিয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে তাঁর দুজন শিষ্যের কাছে এর দুটাে ছিন্ন কপি থেকে যায়। বহু পরে সুপণ্ডিত ইবনে হিশাম এর পাণ্ডুলিপি পরিমার্জনা করেন। আরেক ইতিহাসবিদ আল তাবারি উদ্ধার করেন। বইটির কিছু লুপ্ত অংশ। ইসলাম ও মহানবীর (সা.) জীবন সম্পর্কে আগ্রহী ধাৰ্মিক ও গবেষকেরা এ বিষয়ে তথ্যের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে ইবনে ইসহাকের বইটি শত বছর ধরে ব্যবহার করে আসছেন।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের বরেণ্য সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক এবং অনুবাদক শহীদ আখন্দ। লেখালেখি শুরু করেন বাংলা বিভাগের দুই দশক পর হতে, অর্থাৎ ষাটের দশকে। ১৯৬৪ সালে প্রকাশ পায় তার প্রথম উপন্যাস ‘পান্না হলো সবুজ’। এরপর ১৯৭০ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পাখির গান বনের ছায়া’। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু ছিলো মধ্যবিত্ত জীবনের উপাখ্যান। এরপর ১৯৭০ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পাখির গান বনের ছায়া’। শহীদ আখন্দ একজন বহুমাত্রিক লেখক ছিলেন, এবং এর প্রমাণ পাওয়া যায় তার সৃষ্ট সাহিত্যকর্ম পর্যবেক্ষণ করলে। তার লেখায় এপার-ওপার বাংলার সাধারণ জীবনযাত্রার একটি সূক্ষ্ম চিত্র ফুটে উঠতে দেখা যায়। এছাড়াও তিনি লিখেছেন ভিন্ন ভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে। শহীদ আখন্দ এর বই সমগ্র এর মাঝে তাই আমরা খুঁজে পাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, প্রবন্ধ, ইসলামিক ইতিহাস, কিশোর উপন্যাস, ক্লাসিক অনুবাদগ্রন্থ ইত্যাদি। অর্থাৎ সাহিত্যের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তিনি ছাপ রেখে চলেছেন। শহীদ আখন্দ এর বই সমূহ হলো ‘দূরে, বহুদূরে’, ‘ভালমন্দ ভালবাসা’, ‘একাত্তরের কালবেলায়’, ‘সেই ভালো’, ‘বসতি’, ‘কাকাদীন ও বিজো পাওয়ার’, ‘নষ্ট পদ্য’, ‘স্বপ্নের হাসি কান্না’, ‘সম্রাট আওরঙ্গজেব: নিঃসঙ্গ রাজর্ষি’, ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’, ‘গল্প লেখার কারুকলা’। এছাড়াও তিনি কিছু বিখ্যাত কিশোর ক্লাসিক অনুবাদ করেছেন। ২০০৮ সালে তার উপন্যাস ‘ভেতরের মানুষ’ নাটক রূপে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায় প্রাচারিত হয়েছিলো। ২০০৯ সালের দিকে এ গুণী লেখক দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি রাজধানী ঢাকাতে বসবাস করছেন।