“খুতুবাতে মাদরাজ”-বইয়ের কিছু কথা গত শতাব্দীর কথা। ১৯২৫ সাল ৷ মাদরাজে একটি ধারাবাহিক ইসলামী অালোচনাসভার শৃভারম্ভ হয় ৷ এতে অক্টোবর ও নভেম্বর দুই মাসব্যাপী আটটি অধিবেশন হয় । আলোচক ছিলেন সাইয়ােদ সুলাইমান নদভী তিনি সীরাত বিষয়ক লিখিত অটিটি ভাষণ প্রদান করেন৷ এগুলোই ইতিহাসে খুতৃবাতে মাদরাজ নামে পরিচিত । এটি ১৯২৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। আল্পামা ইকবাল এবং মার্মাডিঊক পিকথলের মতো বিখ্যাত মনীষীগণও মাদ্রাজের এ আলোচনাসভাকে অলষ্কৃত করেছিলেন ৷ কিন্তু সাইয়ােদ সুলায়মান নদভীর আলোচনা যে সাড়া জাগিয়েছিল তা আর কারও ক্ষেত্রে ঘটে নি । আর তা ঘটবার কথাও নয় কারণ, এর আগে তিনি সীরাতূন নবী, সীরাতে আয়েশা এবং আরদুল কুরআনের মতো অতুলনীয় গবেষণাকর্ম সম্পূর্ণ করেছিলেন যার সারনির্ষাস ছিল খুতৃবাতে মাদরাজ ৷ বলা যায়, বিন্দুতে সিন্ধু এঁটে দিয়েছিলেন তিনি । নবীচরিত এবং ইসলামী ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে এত সারগর্ভ রচনা পৃথিবীতে খুব কম আছে ৷ প্রতিটি কথা হৃদয়কে স্পর্শ করে যুক্তিতে প্ৰখর ৷ আবেদনে গভীর বাস্তবতার উজ্জ্বল নবীচরিতের ঐতিহাসিকতা, সর্বজনীনতা, সর্বকালীনতা, পুর্ণাঙ্গতা এবং বাস্তবতা এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় একটি ধর্মতাত্তিক তুলনামূলক পর্যালোচনা যাতে দেখানো হয়েছে যে, উপযুক্ত মানদণ্ডে কেবল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই ৰিশ্বজনীন ও চিরন্তন আদর্শ হতে পারেন, আর কেউ নন । পাশাপাশি এতে রয়েছে বিভিন্ন ধর্ম ও মতের মৌলিক ভুলের সংশোধন, নানা অভিযোগ মিথ্যাচার ও বিষেদগারের প্রতিষেধক, দ্বিধাগ্রস্ত চিত্তের নিরাময়, সত্যান্বেষী মানুষের সৌভাগ্যের পরশমণি ৷ প্রখ্যাত উর্দু কবি নাঈম সিদ্দীকী সম্পাদিত মাসিক সাইয়্যারা’র একটি জরিপে উর্দু ভাষায় সর্বাধিক আলোচিত গ্রন্থ হিসেবে উঠে আসে থুতুবাতে মাদরাজএর নাম ৷ আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খ্যাতনামা চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক ডক্টর রশীদ আহমদ সিদ্দীকী বলেন, ‘আল্লামা নদভীর যে বইটি আমার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে, তা এই খুতুবাতে মাদরাজ ৷ ’ আল্লামা মূঈনুদ্দীন নদভী বলেন, ‘কলেবরে ছোট হলেও খুতুবাতে মাদরাজ জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দর্শন এবং উপকারিতায় বড় বড় বইকেও ছাড়িয়ে যায় ৷’ সইিয়োদ আবুল হাসান আলী নদভী বলেন, ‘ এটি সীরাত বিষয়ে রচিত অন্যতম শক্তিশালী গ্রন্থ ৷ উন্নত ভাব ও ভাষার চমৎকার সমাহার ৷ ঈমানের স্বাদ পাওয়ার মতো ৷ রাসূলের সত্তার সাথে হৃদয়ের নিবিড় সম্পর্ক গড়ার মতো। আমি মনে করি, পৃথিবীব্যাপী সীরাত বিষয়ক সমগ্র গ্রস্থশালার সারনির্যাস ‘খুতুৰাতে মাদরাজ’৷
ভারত-উপমহাদেশে সিরাতচর্চা, ইতিহাস ও আরবিভাষার সাহিত্য নিয়ে যারা গবেষণামূলক কাজ করেছেন, কর্মগুণে হয়েছেন বিশ্ববরেণ্য—সাইয়েদ সুলাইমান নদবি রহ. তাদের সবচেয়ে অগ্রসারির। ১৮৮৪ সালে ব্রিটিশ-ভারতের বিহারের দিসনাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিশ্ববিখ্যাত নদওয়াতে পড়াশোনা করে সেখানেই দীর্ঘ দিন আরবিভাষার পাঠদান করেন এই প্রাজ্ঞ প্রতিভাধর; পাশাপাশি ছিলেন আন-নদওয়া আরবি পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক। কর্মজীবনে শিক্ষকতা ও সম্পাদনার পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থ, প্রদান করেছেন পৃথিবীখ্যাত সিরাত-বিষয়ক ভাষণ—খুতুবাতে মাদরাজ নামে যা বিশ্ববিখ্যাত। সিরাতুন নবি (যুগ্ম), সিরাতে আয়েশা, আরদুল কুরআন, খৈয়ামসহ যা-ই তিনি লিখেছেন, সেটিকেই করে তুলেছেন পাঠ-অনিবার্য। এসব আকরগ্রন্থ তাকে এনে দিয়েছে অমরত্বের মর্যাদা। তার লেখা ইতিহাসের পাণ্ডুলিপিগুলো শাস্ত্রীয় সংজ্ঞা পার হয়ে হৃদয়কেও স্পর্শ করে প্রবলভাবে।