"বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবন" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: রাজনৈতিক ইতিহাস অতীতের কোনো দেশ বা অঞ্চলের শাসন বিস্তার, শাসকের কর্মভূমিকা, শাসনতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক ইতিহাসের ধারাক্রমকে স্পষ্ট করে। এক্ষেত্রে ইতিহাসের নায়ক হয়ে দাঁড়ান রাজা, সুলতান, সম্রাট তথা শাসকবৃন্দ। কিন্তু কোনো দেশ বা অঞ্চলের মানুষের ইতিহাস জানতে হলে, হাজার বছর ধরে পূর্বপুরুষের গড়ে তোলা নানা কৃতিত্ব জেনে নিজেকে উদ্দীপ্ত করতে হলে সে অঞ্চলের মানুষের হাজার বছরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবন নানা দিকে উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ থাকলেও তা এই দেশের প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর জানার সুযোগ তেমনভাবে নেই। কারণ বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস দায়িত্বের সাথে যেভাবে লেখা হয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস তেমনভাবে লেখা হয়নি। এর বড় কারণ সূত্র সংকট। প্রাচীন ও মধ্যযুগের সমকালীন লিখিত সূত্র তেমনভাবে পাওয়া যায়নি। সংস্কৃত ও ফারসি গ্রন্থগুলো থেকে যতটুকু তথ্য মেলে তা দিয়ে রাজনৈতিক ইতিহাস লেখা সম্ভব হলেও সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি জানা সহজ নয়। গত তিন দশকে বাংলাদেশে প্রত্নতত্ত্ব চর্চার ক্ষেত্রে গতি এসেছে। নতুন নতুন সাংস্কৃতিক অঞ্চল আবিষ্কৃত হয়েছে। পাওয়া গেছে নানা ধরনের প্রত্নসূত্র। ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের গবেষকগণ নতুনভাবে প্রত্নসূত্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের এইসব মূল্যবান অঞ্চল কর্ষণ করছেন। এমন বাস্তবতায় কয়েক বছর হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ‘বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবন’ বিষয়ক একটি কোর্স সংযোজন করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু সিলেবাসের আলোকে কোনো বই না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ একটি বড় রকম সংকটে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগেও বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস পড়ানোর দায়িত্ব নেয়া হয়েছে। সকলের জন্যই গ্রন্থ সংকট প্রকট। এই সংকট কিছুটা মোচনের লক্ষ্যে দীর্ঘ শ্রম ও গবেষণার মধ্য দিয়ে বর্তমান গ্রন্থটি রচিত হয়েছে। এই গ্রন্থের ভেতর আবহমান বাংলার মানুষের সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের একটি ছবি পাওয়া যাবে।