"তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ভাষায় অনুদিত তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন’ শহীদ সাইয়েদ কুতুবের সুদীর্ঘ সাধনা ও গবেষণার এক অমর সৃষ্টি। আধুনিক জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত আরব আজমের প্রতিটি মানুষের হৃদয়তন্ত্রীতে কোরআনের বাণী পৌছে দেয়ার এক প্রচন্ড তাগিদ রয়েছে এই তাফসীরের পাতায় পাতায়। শহীদ সাইয়েদ কুতুব বিংশ শতকের একজন কালজয়ী প্রতিভা। তার প্রতিভাদীপ্ত জ্ঞানকোষ থেকে ‘ফী যিলালিল কোরআন’-এর পাশাপাশি তিনি আরাে অনেক কয়টি ইসলামী সাহিত্য রচনা করেছেন। তার প্রতিটি বই যেমনি ইসলামী জ্ঞান গরিমায় মহীয়ান তেমনি তা জেহাদের উদ্দীপনায়ও বলীয়ান। তাঁর সাহিত্য যেমনি ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তােলে তেমনি জেগে থাকা মানুষকে জেহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের সমাজে প্রচলিত ও প্রকাশিত হাজার হাজার ইসলামী সাহিত্যের সাথে শহীদ কুতুবের গ্রন্থমালার এখানেই তফাৎ। তাফসীর শাস্ত্রের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় কোরআনের শত শত তাফসীর গ্রন্থ লেখা হয়েছে সেখানে সেই বিশাল ভান্ডারে আরেকটি সংখ্যা যােগ করার জন্যে যে এই মহাপুরুষ তাঁর কলম ধরেননি, কিছুদূর এগুলে আমি জানি, আপনি নিজেই তা বুঝতে পারবেন। আমি শুধু আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাটুকু আপনাকে বলতে পারি যে, 'ফী যিলালিল কোরআন’ সত্যিই আমাদের সময়ের এক বিষ্ময়কর তাফসীর। দুনিয়ার সব কয়টি সেরা তাফসীর গ্রন্থের পাশাপাশি এটি নিসন্দেহে আমাদের সাহিত্যে এক মহা মূল্যবান সংযােজন।
সাইয়েদ কুতুব (১৯০৬ - ১৯৬৬) হলেন একজন মিশরীয় ইসলামি চিন্তাবিদ এবং রাজনৈতিক সংগঠক। তিনি মিশরের ইসলামী আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুড) দলের মুখপত্র ইখওয়ানুল মুসলিমিন'এর সম্পাদক ছিলেন। তাকে তৎকালীন সরকার ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত করে। তিনি মিশরের উসইউত জিলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মূল নাম হল সাইয়েদ; কুতুব তার বংশীয় উপাধি। তার পিতার নাম হাজী ইবরাহীম কুতুব; তিনি চাষাবাদ করতেন। তার মাতার নাম ফাতিমা হোসাইন উসমান। তারা মোট দুই ভাই এবং তিন বোন ছিলেন। তার অপর ভাই হলেন: মুহাম্মাদ কুতুব এবং বোনেরা হলেন: নাফীসা কুতুব, হামিদা কুতুব এবং আমিনা কুতুব। সাইয়েদ কুতুব ছিলেন সবার বড়। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাইয়েদ কুতুবের শিক্ষা শুরু হয়। শৈশবেই কুরআন হেফজ করেন। পরে তাজহিযিয়াতু দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষা সমাপ্ত করে কায়রোর বিখ্যাত মাদ্রাসা দারুল উলুমে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সালে ঐ মাদ্রাসা থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানেই অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তিনি শিক্ষা মন্ত্রোণালয়ের অধীনে স্কুল ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন। এবং এ-সময় আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি পড়ার জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। তিনি দু’বছরের কোর্স শেষ করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৫৪ সালে তাকে বন্দি করে মিসরের বিভিন্ন জেলে রাখা হয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রখ্যাত আলেম ও সাহিত্যকদের অন্যতম। ছোটদের জন্যে আকর্ষণীয় ভাষায় নবীদের কাহিনী লিখে তার সাহিত্যক জীবনের সূচনা। পরবর্তীকালে ‘আশওয়াক’ (কাটা) নামে ইসলামি ভাবধারার একটি উপন্যাসও রচনা করেন।