"তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন" বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ মানব জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগ নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে যা কিছু প্রয়ােজন ইসলাম সে সব বাস্তব ব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেছে। মানুষ কিভাবে আয় রােজগার করবে এবং এ জন্যে তাদের জান-মালকে কিভাবে কাজে লাগাবে সে বিষয়েও এ অধ্যায়ে যথেষ্ট আলােচনা এসেছে। এ বিষয়ে তাদের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদেরকে বাস্তব কর্মপন্থা নির্দেশ করা হয়েছে। তাদের সামগ্রিক জীবনকে পরিশীলিত করার জন্যে তাদের মধ্যে প্রয়ােজনীয় ত্যাগ কোরবানীর প্রেরণাও সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব কিছু হাসিল করার জন্যে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ রব্বল ইযযতের পরিচালনা সর্বান্তকরণে কবুল করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে কোরআনের শিক্ষা ও নবী (স.)-এর শিক্ষাকে তারা সদাসর্বদা সামনে রেখেছে। আর এ সব কিছু সম্ভব হয়েছে এ কারণেই যে তারা সর্বান্তকরণে ও সন্তুষ্ট চিত্তে, পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা সহকারে আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালার যাবতীয় বিষয়কে মেনে নিয়েছে। কেবলা পরিবর্তন ও তার পটভূমিকাঃ এ পর্যায়ে এসে আমরা দেখতে পাই কেবলা পরিবর্তনের ঘটনা, যার মাধ্যমে একথা স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, উম্মতে মােহাম্মাদীই হচ্ছে ‘উম্মাতে ওয়াসাত’ কেন্দ্রীয় উম্মত, মধ্যমপন্থী উম্মাত এবং মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী উম্মাত। এই উম্মাতের ব্যক্তিরা গােটা মানবমন্ডলীর কাছে সত্যের বাস্তব রূপ নিয়ে হাযির হবে এবং মােহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (স.) তাদের জন্যে হবেন সত্যের সাক্ষী। উম্মাতে মােহাম্মাদী গােটা মানব মন্ডলীকে নেতৃত্ব দেবে এবং তাদের ওপর সর্বপর্যায়ে এই উম্মতই কর্তৃত্ব করবে। তারাই ব্যাখ্যা দেবে সবকিছুর। তবে এ কাজ কোনােক্রমেই সহজ নয়। এর জন্যে প্রয়ােজন পর্বতসম অবিচলতা যাতে করে মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে তারা এ কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম দিতে পারে এবং এ কাজ করতে গিয়ে যতাে বাধা বিঘ্ন ও দুঃখ-দৈন্য আসে তা হাসিমুখে বরদাশত করতে পারে। সারা দুনিয়ার সকল মানুষকে পথ দেখানাের জন্যেই ছিলাে এ মহা দায়িত্ব।
সাইয়েদ কুতুব (১৯০৬ - ১৯৬৬) হলেন একজন মিশরীয় ইসলামি চিন্তাবিদ এবং রাজনৈতিক সংগঠক। তিনি মিশরের ইসলামী আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুড) দলের মুখপত্র ইখওয়ানুল মুসলিমিন'এর সম্পাদক ছিলেন। তাকে তৎকালীন সরকার ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত করে। তিনি মিশরের উসইউত জিলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মূল নাম হল সাইয়েদ; কুতুব তার বংশীয় উপাধি। তার পিতার নাম হাজী ইবরাহীম কুতুব; তিনি চাষাবাদ করতেন। তার মাতার নাম ফাতিমা হোসাইন উসমান। তারা মোট দুই ভাই এবং তিন বোন ছিলেন। তার অপর ভাই হলেন: মুহাম্মাদ কুতুব এবং বোনেরা হলেন: নাফীসা কুতুব, হামিদা কুতুব এবং আমিনা কুতুব। সাইয়েদ কুতুব ছিলেন সবার বড়। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাইয়েদ কুতুবের শিক্ষা শুরু হয়। শৈশবেই কুরআন হেফজ করেন। পরে তাজহিযিয়াতু দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষা সমাপ্ত করে কায়রোর বিখ্যাত মাদ্রাসা দারুল উলুমে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সালে ঐ মাদ্রাসা থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানেই অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তিনি শিক্ষা মন্ত্রোণালয়ের অধীনে স্কুল ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন। এবং এ-সময় আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি পড়ার জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। তিনি দু’বছরের কোর্স শেষ করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৫৪ সালে তাকে বন্দি করে মিসরের বিভিন্ন জেলে রাখা হয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রখ্যাত আলেম ও সাহিত্যকদের অন্যতম। ছোটদের জন্যে আকর্ষণীয় ভাষায় নবীদের কাহিনী লিখে তার সাহিত্যক জীবনের সূচনা। পরবর্তীকালে ‘আশওয়াক’ (কাটা) নামে ইসলামি ভাবধারার একটি উপন্যাসও রচনা করেন।