"সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী"বইটির ভূমিকা: সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। দরুদ ও সালাম রাসুলগণের নেতা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সঙ্গীসাথির প্রতি। যারা কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করবে। ইহসান, ঈমান ও জিহাদের সঙ্গে তাদের প্রতিও সালাম। মহান বিজয়ী শাসক সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ইসলামের অবিনশ্বর মুজিযাগুলাের অন্যতম। আল্লাহ তাআলার উজ্জ্বল নিদর্শনগুলাের অন্যতম নিদর্শন। তিনি এই দাবি ও অধিকার রাখেন যে, মুসলিম সমাজের আলেম ও জ্ঞানী এবং ইসলামের মহত্ত্ব ও বীরত্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অহমিকা এবং মানবিক সাহসিকতার ধারক-বাহকেরা তাঁর জীবন ও কর্মরাশি নিয়ে প্রতিটি জায়গায় প্রতিটি যুগে ব্যাপৃত থাকবেন; লেখক ও গবেষকগণ তাঁর জীবনচরিত, তাঁর মর্যাদা ও বীরত্বগাথা রচনায় প্রতিযােগিতা করবেন, তাকে নিয়ে জ্ঞানকোষ তৈরি করবেন এবং এ-বিষয়ে লেখালেখি ও গবেষণায় নিবেদিতপ্রাণ হবেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলতে হয়, মুসলিম জাতি এবং আরবগণ এই কীর্তিমানের অধিকার আদায় করেন নি এবং তাঁর প্রতি সুবিচার করেন নি। কয়েকটি ইউরােপীয় ভাষায়, বিশেষ করে ইংরেজি ভাষায় তাঁকে নিয়ে যা-কিছু রচিত হয়েছে তা ইসলামি ভাষায় যা রচিত হয়েছে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। এ বিষয়টি এখনাে এমন একজন লেখকের প্রতীক্ষায় যার রয়েছে দৃঢ় সঙ্কল্প, দীর্ঘ অধ্যবসায়ের মনােবল, সূক্ষ্মদৃষ্টি, উদারত এবং অসীম ধৈর্য। আশা করা যায়, পাঠকবৃন্দ এতে এমন খােরাক পাবে যা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওতের চিরন্তনতা এবং এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও ঈমানের শক্তির ব্যাপারে তাদের বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করবে। এই পুস্তকে তাঁরা আশ্চর্যজনক ঘটনাবলির মুখােমুখি হবেন। তাঁরা এই মুসলিম নেতা—সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী, যিনি ঈমানি পরিমণ্ডলে লালিত-পালিত হয়েছেন এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শিক্ষালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন—এবং যেসকল নেতা বিধর্মীয় সংস্কৃতির দুগ্ধ পান করেছেন, উপযােগবাদ ও বস্তুবাদের দুর্গে লালিত-পালিত হয়েছেন এবং যারা রাজনৈতিক অভিলাষ ও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সাধনে নেতৃত্বের ময়দানে রয়েছেন তাদের মধ্যে বড় পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য কী সেটা অনুধাবন করতে পারবেন। এই পার্থক্যসূচক বৈশষ্ট্যিই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মধ্যে একটি বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি করে দিয়েছে। ইসলামি বিশ্ব তার আগুনে ঝলসে যাচ্ছে এবং তার মাশুল দিচ্ছে।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।