"মাসুদ রানা : ক্লাইম্বার ও মরুস্বর্গ" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ক্লাইম্বার। মাঝ-আকাশে ঘটে গেল রুদ্ধশ্বাস ডাকাতি। কিন্তু তারপরেই দুবৃত্তদের বিমান আছড়ে পড়ল রকি পর্বতমালার উপর, একশাে মিলিয়ন ডলার ভর্তি তিনটে বাক্স হারিয়ে গেল উঁচু-নিচু পর্বতশৃঙ্গের মাঝে। বেতারে পাঠানাে হলাে সাহায্যের আবেদন। আবেদনে সাড়া দিল দু’জন উদ্ধারকারী। ওরা এলেই আটক করা হলাে তাদের। বাধ্য করা হলাে ডলার-ভর্তি বাক্স খুঁজে বের করতে। কাজ শেষ হওয়ামাত্র খুন করা হবে ওদের। কিন্তু উদ্ধারকারীদের একজনের নাম মাসুদ রানা, সেটা ওদের জানা ছিল না। মরুস্বর্গ। কোথায় ওই ক্যাসিনাে? সব দেশের সিক্রেট সার্ভিস খুঁজছে ওটাকে। কেন? গােটা দুনিয়ার লেজে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এক ভয়ানক দুবৃত্ত ওই ক্যাসিনাে থেকেই নাকি আসছে সেই ড্রাগ। একবিংশ শতাব্দীর অভিশাপ। পাগল হয়ে উঠেছে গােটা বিশ্বের তরুণ-যুবা। এমন নেশা যে, একবার নিলে কী মরলে! আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে ওরা ড্রাগ না পেলে। শুধু ঢাকা শহরেই গত ছয় মাসে দেড় হাজার অ্যাডিক্ট খুন করেছে সতেরাে হাজার নিরীহ মানুষকে। প্রথম সুযােগেই ঢুকে পড়ল রানা ওই ক্যাসিনােয়। জানে না, ও শিকার না শিকারী।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন যে মানুষটি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণী। বিদ্যুৎ মিত্র এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। পাঠকদের কাছে পরিচিত প্রিয় কাজীদা নামে। প্রখ্যাত গণিতবিদ ও সাহিত্যিক বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ও মা সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী শামসুদ্দিন নওয়াব। পরিবারের সঙ্গীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই ‘কুয়াশা’ সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’ পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার। সালটা ১৯৬৫, মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে এলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি। সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বই সমূহ এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিসবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই সমগ্র রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের যে পিপাসা পাঠকের মনে তৈরি করেছে তা মেটাতে সাড়ে চারশোরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়ছে সেবা প্রকাশনীকে, যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।