"চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার (অখণ্ড সংস্করণ)" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ কোনাে জনপদ বা জনগােষ্ঠির ইতিহাসে ভুল তথ্যউপাত্ত থাকা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, যারা ইতিহাস রচনা করেন, তাদের অনেকেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী থাকেন না। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া উপাদান বিশ্লেষণ করেই তাদের চলতে হয়। সংগৃহীত তথ্যউপাত্তে গলদ থাকলে তার প্রভাব লেখনিতেও পড়ে। পর্যাপ্ত তথ্যসূত্র না পাওয়ার কারণেও অস্পষ্টতা তৈরি হতে পারে। তাই বলে ভ্রান্তি আর অলীক কল্পনাকে আশ্রয় করে লেখা কোনাে কাহিনীকে ইতিহাস বলা যায় না। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা জনগােষ্ঠির ইতিহাস লিখতে গিয়ে সেটাই করা হয়েছে। ১৯০৯ সালে সতীশ চন্দ্র ঘােষের ‘চাকমা জাতি’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে যার শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন পরবর্তী লেখকগণ। ইতিহাসভিত্তিক বইয়ে সত্যের যে তেজ এবং ধারাবাহিকতা থাকে চাকমাদের প্রচলিত ইতিহাসে তার লেশমাত্র খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়েছেন অশােক কুমার দেওয়ান। পীড়িত হয়েছেন মিথ্যাকে ইতিহাস হিসেবে মর্যাদা পেতে দেখে। তাই একজন চাকমা হয়েও তাঁকে চ্যালেঞ্জ করতে হয়েছে স্বজাতির প্রচলিত ইতিহাসকে। ‘চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার’ লিখতে গিয়ে তিনি তাঁর পাণ্ডিত্য ও গবেষণা কষ্টিপাথরে যাচাইয়ের নিরলস প্রচেষ্টায় ভুলগুলােকে শনাক্ত করেছেন, আবিষ্কার করেছেন নতুন সূত্র, নতুন পথ। চাকমাদের সাথে মােগলদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যার অকাট্য প্রমাণ হিসেবে সিলমােহরসহ অনেক কিছুই বিদ্যমান আছে এ বইয়ে। পূর্বেকার ইতিহাসকারকেরা এসব সূত্র সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। অশােক কুমার দেওয়ানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নবীন কোনাে সাহসী ও সত্যসন্ধানী এটায় হাত দেন, হয়তাে উন্মােচিত হতে পারে চাকমা জাতি ইতিহাসের নতুন রূপরেখা।