দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সিঙ্গাপুরে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক বড় অধ্যায় রচিত হয়। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে এখানে গঠিত হয় আজাদ হিন্দ সরকার এবং আজাদ হিন্দ ফৌজ বা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি। ১৯৪২ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে জাপানীদের কাছে ব্রিটিশ জেনারেল পারসিভালের আত্ম-সমর্পনের মধ্য দিয়ে সিঙ্গাপুরের পতন ঘটে। জাপান অধিকৃত সিঙ্গাপুরে অক্ষশক্তির মিত্র হিসেবে নেতাজীর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকার ও আজাদ হিন্দ ফৌজের যাত্রা শুরু হয়। নেতাজী কেন অক্ষশক্তি অর্থাৎ হিটলার, মুসোলিনি ও জেনারেল তোজোর মিত্র হতে গেলেন? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণাম সকলেরই জানা। কিন্তু নেতাজীর ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা আজও রহস্যাবৃত। তাঁর কর্ম এবং অন্তর্ধানের বিশাল এক পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাস। যুদ্ধ কখনোই মঙ্গল বয়ে আনে না। কিছু মানুষের জীবনে এই যুদ্ধ বংশপরম্পরায় ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। এই উপন্যাসের পাত্রপাত্রীদের কেউ কেউ তার শিকার। কিন্তু ভালোবাসা এই অভিশপ্ত জীবনকেও বদলে দিতে পারে, জন্ম দিতে পারে নতুন কোনো উপলব্দির-যা আজন্ম পাপ বলে মনে করা ধারণা থেকে ভিন্ন-ভেতর থেকে জাগিয়ে তুলতে পারে আত্ম-বিশ্বাস ও এমন এক শক্তি যা মানুষকে নতুনভাবে বাঁচতে শেখায়, নতুন নতুন পথ দেখায়।
Abul Kasem- ১ জুলাই ১৯৫৫ কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলার ঝাঁকুনি-পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন শেষে সরকারি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে প্রবেশ করেন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব। ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। তখন থেকে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় তাঁর প্রবন্ধ, গবেষণাপ্রবন্ধ, ছোটগল্প, সমালোচনামূলক প্রবন্ধ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়ে আসছে। কথাসাহিত্যে তার বিচরণ বেশি। সেখানে তিনি অতীত ইতিহাসের অমীয় উপাদানের সন্ধান করেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন ইতিহাস আশ্রয়ী বাংলা সাহিত্যকে। ক্যাপ্টেন কক্স, অজেয় এবং সরহপা সে ধরনের উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কিছু বই রয়েছে তাঁর। মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা, মুক্তিযুদ্ধে জয়পুরহাটে ছাড়াও রয়েছে মুক্তির মন্দির সোপানতলের মতো হৃদয়স্পর্শীর মুক্তিযুদ্ধের গল্পের বই। ইতিহাস বইগুলো আঞ্চলিক ও জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে আছে। তাঁর গবেষণাপ্রবন্ধে সমকালীন বিশ্বসাহিত্যের একটি বিশেষ ধারার গভীরতর চিন্তাধর্মী বিষয়গুলো যেমনÑ অস্তিত্ববাদ, পরাবাস্তববাদ, চেতনাপ্রবাহরীতি, অ্যাবসার্ডিটি প্রাধান্য পেয়েছে। চা শিল্পের ইতিহাস, বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। বাংলা ভাষায় তা শুধু ব্যতিক্রমই নয়, অনন্য সাধারণও। তাঁর চা শিল্পের ইতিহাস কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০। কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদকসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।