‘মুসলিমদের প্রতি অশ্রুঝরা আকুতি আলোর মিনার’ বইয়ের কিছু কথা: ঈসা আ. পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার কয়েকশ বছর হয়ে গেল। পুরো পৃথিবীকে ঘিরে নিয়েছে নিকষ অন্ধকার। বায়তুল্লাহতে স্থান পেয়েছে মূর্তি! মহান পরওয়ারদেগারের উপাসনা করার মত কেউ নেই পুরো পৃথিবীতে। তখন মা আমেনার কোলজুড়ে নেমে এলো একটি আলোর রেখা। নিকষ অন্ধকারে তিনি জ্বালিয়ে দিলেন আলোর বাতি। কিন্তু অন্ধকারে খেই হারিয়ে ফেলা মক্কার মুশরিকরা তাঁর দাওয়াত কবুল করলো না। শুরু হল তাঁর উপর অত্যাচার; কিন্তু তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নয়। আল্লাহর বাণী প্রচার করতে থাকলেন নির্বিরাম। কিন্তু তাদের অত্যাচারে একপর্যায়ে হিজরত করে মদিনায় চলে যান। এরপর রচিত হয়েছে ইতিহাস। মদিনা থেকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে ইসলামের আলো পুরো পৃথিবীতে। তৎকালীন পৃথিবীর পরাশক্তি রোম এবং পারস্য মুসলমানদের কাছে মাথানত করতে বাধ্য হয়েছে। একপর্যায়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনে গিয়ে আছড়ে পড়েছে ইসলামের বিজয়রথ। মদিনায় হিজরতের ত্রিশ বছরের মাথায় উমর রা. অর্ধপৃথিবী শাসন করেছেন। এভাবে কেটেছে কয়েকশ বছর। আমাদের গাফলতির কারণে কাফেররা মাঝে মাঝে আমাদের উপর প্রাধান্য লাভের চেষ্টা করেছে; কিন্তু বারবার মুহাম্মাদ বিন কাসিম, কুতায়বা বিন মুসলিম, নুরুদ্দিন জঙ্গি, সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি, রুকনুদ্দিন বাইবার্স আর সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহদের তরবারি গর্জে উঠেছে। কামাল আতাতুর্কের গাদ্দারির মাধ্যমে উসমানি খেলাফত বিলুপ্ত হয়। এরপর থেকে মুসলমানরা পৃথিবীতে মার খেয়েই যাচ্ছে। পবিত্র ভূমি বায়তুল মাকদিস পুনরায় অভিশপ্ত ইয়াহুদিরা নব্বই বছর থেকে দখল করে আছে। আফগান, ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আরাকান, সিরিয়া, মিশর এবং বসনিয়ায় মুসলিমদের কচুকাটা করা হচ্ছে! মুসলমান মা-বোনদের আর্তচিৎকারে খোদার আরশ কেঁপে উঠছে! কিন্তু আমাদের আয়েশের ঘুম থেকে জাগাতে পারে না! আমরা ছিলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। কেন আমরা এখন সবচেয়ে অসহায় জাতিতে পরিণত হলাম? যে জাতির সামনে রোম এবং পারস্যের মত পরাশক্তি লুটিয়ে পড়েছিল, সে জাতি আজকে কেন গুটিকয়েক অভিশপ্ত ইয়াহুদির হাতে যুগের পর যুগ মার খেয়েই যাচ্ছে? আমরা কি আবার আমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব? যেতে হলে কী করতে হবে আমাদের? জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে শায়খ আলি তানতাবি রাহ.’র অশ্রুমাখা লেখাগুলো।
মুফতি রেজাউল করীম আবরার বাংলাদেশের উদীয়মান একজন ইসলামি স্কলার। প্রচুর মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে ইতিমধ্যে তিনি বাংলাদেশে ফিকহে হানাফির প্রতিনিধিত্বশীল একজন আলেমে পরিণত হয়েছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসরণে ওলামায়ে দেওবন্দের অনুসৃত পথে তিনি বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ইসলাম ও ফিকহর দাওয়াত নিয়ে। মুফতি রেজাউল করীম আবরার সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের তালবাড়ী পূর্ব গ্রামে ১৯৯২ ঈসায়ি সনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন শায়খুল হাদিস আল্লামা কুতবুদ্দীন রাহ.। তার নানা হলেন শায়খুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী রাহি. এর স্নেহধন্য শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফিজ জাওয়াদ হুসাইন পারকুলি রাহি.। তিনি তাকমিল ফিল হাদিস সমাপ্ত করেন ঢাকাস্থ জামেয়া ইকরায়। তাখাসসুস ফি উলুমিল হাদিস পড়েন ঢাকার মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ায় ও তাখাসসুস ফিল ফিকহি ওয়াল ইফতা পড়েন জামেয়া আবু বকরে। লেখাপড়া শেষ করে জামেয়া আবু বকর যাত্রাবাড়িতেই মুফতি এবং সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে শুরু হয় তার কর্মজীবন। সেখানে তিনি পাঁচ বছর বুখারী শরীফ সহ হাদীসের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি পাঠদান করেছেন। শিক্ষকতার জীবনে তিনি একজন সফল শিক্ষক। ছাত্রদের কাছে বিপুল জনপ্রিয় তার দরস। শিক্ষকতার পাশাপাশি মিডিয়াতে রয়েছে তার সরব বিচরণ। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং এফ.এম রেডিওতে তার তাত্ত্বিক আলোচনা বেশ সমাদৃত হচ্ছে। যুগে যুগে ফিকহের ব্যাপারে কিছু মানুষ অপপ্রচার করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ফিকহে হানাফির ব্যাপারে কিছু লোক বিভিন্ন আপত্তি করতে থাকলে তাদের অসারতা প্রমাণে বাংলাদেশে যে কয়েকজন তরুণ আলেম উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলছেন, তিনি তাদের মাঝে অন্যতম। মুনাজারা তথা বিতর্ক শাস্ত্রে তিনি বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছু মুনাজারায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং হককে সুন্দরভাবে সুপ্রতিষ্ঠিতে করেছেন। ছাত্র থাকাকালীন সময়েই প্রকাশিত হয় তার অনূদিত এবং তাখরিজজকৃত প্রথম গ্রন্থ তারাবীর নামায, একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা। এরপর ড. শায়খ আলি তানতাবির আলোর মিনার (অনুবাদ), দাজ্জাল: ফিতনা ও পর্যালোচনা (মৌলিক) ছাড়াও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে এবং বিজ্ঞমহলের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। তার অন্যান্য বইগুলো হলো – বারো মাসের করণীয় ও বর্জনীয়, ইমাম আযম আবু হানিফা রহ., আপনি কীভাবে নামাজ পড়বেন?, ইসলাম ও কুফুরের সংঘাত, কালেমার প্রামাণিকতা, শামায়েল তিরমিযি, আলোর মিনার, কুরআন সুন্নাহর আলোকে বেদআত, জান্নাতে যাওয়ার হাজার পথ, ওরিয়েন্টালিস্ট: স্বরুপ সন্ধান, খতমে নবুওয়াত ও প্রতিশ্রুত মাসীহ। তিনি বর্তমানে জামেয়া মাহমুদিয়া, যাত্রবাড়ি, ঢাকার প্রধান মুফতী এবংজামেয়া ইসলামিয়া, কুতুবখালি, ঢাকার শায়খুল হাদীস হিসেবে ইলমি খেদমতে রয়েছেন। এছাড়াও তিনি জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন । আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।