“লিটল ওম্যান" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর গৃহযুদ্ধ-বিধ্বস্ত আমেরিকার একটি সংস্কৃতিবান মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে এ কাহিনির ভিত্তিভূমি রচিত হয়েছে। এ পরিবারের আবেগ-চঞ্চলা চারটি কিশােরী মেয়ের স্বপ্ন-কামনা, দুঃখ-বেদনা আর কল্যাণবােধে অনুরণিত এক জীবন-জিজ্ঞাসায় বিমূর্ত হয়ে উঠেছে এ কাহিনির প্রতিটি অধ্যায়ে। কিন্তু ব্যক্তি-চরিত্র হিসেবে তাদের। স্বতন্ত্র মন আর স্বতন্ত্র আবেগ-অনুভূতির স্পর্শ সর্বত্র সুস্পষ্ট ছাপ রাখলেও একটি পথনির্দেশক আলােক-স্তম্ভকে অবলম্বন। করেই তারা পাশাপাশি গড়ে উঠেছে এবং তাদের মধ্যে। জীবন-চেতনা প্রশাখা বিস্তার করেছে। এ কেন্দ্র-চরিত্র হচ্ছে, তাদের মা—আর সেই সঙ্গে তাদের সহযাত্রী, বন্ধু ও দিশারী । পুরুষ চরিত্রগুলােও একই সঙ্গে স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মােট কথা, সবদিক থেকে এটি একটি অনন্য জীবনকথা। আমেরিকার নারী-সমাজে লিটল উইমেনের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমাদের দেশে এ ধরনের আদর্শ পারিবারিক উপন্যাস নেই বললেই চলে। আমাদের সকল শ্রেণির পাঠকের—বিশেষ করে মেয়েদের পক্ষে অবশ্য-সংগ্রহযােগ্য বইয়ের মধ্যে এ বইটি নিঃসন্দেহে অগ্রগণ্য হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তাছাড়া, সাহিত্যিক মূল্যের দিক থেকে ‘ লিল উইমেনের এ অনুবাদ-সংস্করণ নিশ্চিতভাবে আমাদে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে ।
১৯৩২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া রাজ্যে লুইজা মে অলকটের জন্ম হয় । সে যুগের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ এনাস ব্রনসন অ্যালকট ছিলেন তাঁর পিতা। প্রকৃতপক্ষে, ষােলাে বছর বয়স থেকেই লুইজা মে অলকট সাহিত্য-সাধনা শুরু করেন। কিন্তু একত্রিশের কোঠায় পৌছার পূর্ব-পর্যন্ত তিনি বিশেষ কোনাে প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে পারেননি। মাঝখানের এই সময়টাতে তিনি শিক্ষকতা এবং সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবিকা হিসেবে কাজ করেন। ১৮৬২ সালে যুক্তরাস্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটনে যান এবং ইউনিয়ন-বাহিনীতে নার্সের কার্যভার গ্রহণ করেন। নার্স থাকা-কালে হাসপাতাল জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বেশকিছু গল্প লেখেন। ১৮৬৩ সালে এই লেখাগুলাে প্রকাশিত হওয়ার পরই সাহিত্য-ক্ষেত্রে তার প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। ১৮৬৬ সালে তিনি ইউরােপ সফর করেন এবং এই সময়ই তিনি “লিটল উইমেন’ উপন্যাস লেখা শুরু করেন । এই বইটি প্রকাশিত হওয়ার অল্পকালের মধ্যেই সমগ্র আমেরিকায় তাঁর খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে আর সেই সঙ্গে কথাশিল্পী হিসেবে তিনি এক ঐতিহাসিক কীর্তির উত্তরাধিকারিত্ব লাভ করেন। ১৮৬৮ সালে প্রথম প্রকাশের পর তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে লিটল উইমেনে’র ৮৭ হাজার কপি বিক্রি হয়। এরপর জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সংস্করণে, এর লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয় এবং আমেরিকা, ইউরােপ ও প্রাচ্যের বহু ভাষায় অনুবাদ-সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সাহিত্যিক কৃতিত্বের অবিস্মরণীয় স্বাক্ষর রেখে এই মহীয়সী কথাশিল্পী ১৮৮৮ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।