মহান রাব্বল আলামীন মানব জাতির সার্বিক কল্যাণের জন্য যে মহা গ্রন্থ নাজিল করেছেন, সেই পবিত্র কুরআনুল কারীম কে ভালভাবে বােধগম্য করার জন্য কতিপয় মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন একটি অপরিহার্য বিষয় যে গুলােকে “উলুমূল কুরআন” বলা হয়। যে ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ অধ্যয়ন ও গবেষণা ছাড়া তাফসীরুল কুরআন নিজে বুঝা ও তাসফীর করা অসম্ভব ও ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা যারাই উলুমে কুরআন তথা তাফসীরে মূলনীতি অনুসরণ না করে তাফসীর লিখেছে কিংবা তাফসীর করেছে তাদেরই পদস্খলন ঘটেছে। বস্তুত “উলুমূল কুরআন” এক সুপ্রশস্ত ব্যাপক ও সমৃদ্ধ ইলম। যেখানে তাফসীর শাস্ত্রের সূচনাকালীন আলােচনা ও মূলনীতিসমূহ সুস্পষ্টভাবে আলােচনা করা হয়ে থাকে। আর এ কারণে যুগযুগ ধরে মানুষ নানাভাবে ইহার খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে আসছে। সংকলিত হয়েছে জগত বিখ্যাত লেখক ও মনীষীদের রচিত হাজার হাজার গ্রন্থ। সেই সকল গ্রন্থসমূহের মধ্যে একটি হলাে বক্ষমান গ্রন্থ “উলুমূল কুরআন” যার রচয়িতা হলেন বিশ্ববিখ্যাত আলেমে দ্বীন, যুগশ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ, এবং কালজয়ী ইসলামী লেখক, শাইখুল ইসলাম আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ ত্বকী উসমানী সাহেব। যার মধ্যে তিনি কুরআন বিষয়ক যাবতীয় ইলম ও উসলে তাফসীরের মূলনীতি সমহ বিস্তারিত আলােচনার পাশাপাশি এই সংক্রান্ত নানাবিধ ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে তাঁর সূচিন্তিত মতামত, সুগভীর ইসলামিক প্রজ্ঞা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার আলােকে আলােচনা পর্যালােচনা করেছেন। যা সম্মানিত পাঠকবৃন্দকে “উলুমুল কুরআন” সংক্রান্ত অপরাপর বড় বড় গ্রন্থ ও সুদীর্ঘ আলােচনা থেকে বিমুখ করে দিয়েছে। উসুলে তাফসীরের সীমা অতিক্রম করে যে সকল তাফসীর কারক তাদের কল্পিত চিন্তাধারা, বিশেষ করে জড়বাদী মতাদর্শের অনুসারী, সেই সকল প্রাচ্য-পাশ্চাত্য-পণ্ডিতদের মনগড়া উক্তির বিজ্ঞানসম্মত জবাব দেওয়া হয়েছে। এবং এযুগের চাইদা মাফিক সুচারুভাবে সারাংশ ও সারনির্যাস হিসেবে বইটিতে উপস্থাপন করেছেন। ফলে বইটি জামে মানে পরিপূর্ণ হয়েছে এবং উলুমে কুরআন সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সুন্দর ও সাবলীলভাবে আলােকপাত করা হয়েছে। আশা করি বইটি দ্বারা সকলে উপকৃত হতে পারবেন।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।