কথাসাহিত্যের জীবনঘনিষ্ঠ আঙ্গিনায় মঈনুল হাসানের পদচারণা মোটেই দীর্ঘদিনের নয়। তথাপি তাঁর পদক্ষেপ শেকড়প্রতিম দৃঢ়তার পরিচয় বহন করে। গল্পের ভুবনে তাঁর আত্মপ্রকাশ বিলম্বে হলেও কে জানে -- হয়তোবা তাঁর পাঠপ্রস্তুতি ছিল অনেকদিনের; নইলে যাপিত জীবনের গভীরতর তলানি পর্যন্ত নির্মোহ দৃষ্টিতে অবলোকনের এই শাণিত দৃষ্টিভঙ্গি তিনি পেলেন কোথায়! একজন নবীন কথাকারের কলমে এমন তীক্ষ্ণধার সূক্ষ্মতা এলো কোত্থেকে! এ সবই তাঁর শৈল্পিক অর্জন। ‘বাস্তুসাপ’ লেখকের প্রথম গল্পগ্রন্থ। গ্রন্থভুক্ত প্রতিটি গল্পেই চিরায়ত পল্লীবাংলার মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের মানুষের দিনানুদৈনিক জীবনের ছবি নিপুণ হাতে আঁকা হয়েছে। তাঁর গল্পের চরিত্রসমূহ লেখকের হাতের ক্রীড়নক মাত্র হয়ে ওঠেনি, বরং নান্দনিক ভঙ্গিতে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক বিকাশ ঘটেছে। মানবিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ও দ্বন্দ্ব সংঘাতের রক্তখচিত চিত্র তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অংকন করেছেন। গ্রামজীবনের সারল্যের ছবির পাশাপাশি সমাজের অশিক্ষা, কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার মসীলিপ্ত ছবিও তাঁর হাতে চমৎকারভাবে উন্মোচিত হয়েছে। মৃত্তিকালগ্ন মানুষেরা জীবনের জয়গান গেয়েছে তাঁর গল্পে। কথাসাহিত্যের শ্যামল সবুজ চত্বরে আমি মঈনুল হাসানকে স্বাগত জানাই। রফিকুর রশীদ কথাসাহিত্যিক
মঈনুল হাসান ছড়াকার ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম ৪ঠা আগস্ট (বাংলা ২০ শ্রাবণ), ঢাকায়। তবে পৈতৃক নিবাস ফেনী জেলায়। বাবা মরহুম মাে. আব্দুল আউয়াল এবং মা বেগম শামসুন নাহার। নব্বই দশকের শুরুর দিকে কৈশাের পেরােনাে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে লেখালেখির সূচনা। তারপর দীর্ঘ বিরতি। বর্তমানে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে চাদপুরে কর্মরত। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘শিশু’ পত্রিকাসহ বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিতভাবে ছড়া ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ: ফুলকুড়ানি মেয়ে (অমর একুশে বইমেলা ২০১৬-তে অনন্যা থেকে প্রকাশিত)।