“সমকালীন প্রেক্ষাপটে ইসলামের হদ-কিসাস”— শায়খ মুহাম্মাদ সাইদ রামাদান বুতি রহ. প্রণীত “আলউকুবাতুল ইসলামিয়্যাহ, ওয়া উকদাতুত তানাকুযি বাইনাহা ওয়া বাইনা মা ইউসাম্মা বি-তাবিয়াতিল আস্র” এর বাংলায়ন। অনুবাদ করেছে তরুণ চিন্তাশীল আলিম ও খ্যাতিমান অনুবাদক আলী হাসান উসামা। প্রিয় আলী হাসান উসামা বইটির বাঙলা অনুবাদের মত প্রশংসনীয় একটি কাজই শুধু সম্পন্ন করেনি, বরং সংযোজিত করেছে একটি চমৎকার ভূমিকাও। এই পুস্তিকায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে ইসলামি দণ্ডবিধি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা ও কিছু মিথ এবং মানবমনে উৎসারিত কতিপয় দ্বিধার যথার্থ জওয়াব প্রদানের প্রচেষ্টা করা হয়েছে। মূল আরবি পুস্তকটি অত্যন্ত জটিল এবং আরবি ব্যাকরণের ঋদ্ধ প্রয়োগে সমৃদ্ধ। ফলত এর অনুবাদ স্বভাবতই পরিশ্রমের। বস্তুত স্বার্থক অনুবাদ সম্পন্ন করাটা কখনো কখনো মৌলিক রচনার থেকেও কঠিন হয়। বিশেষত এ জাতীয় পুস্তিকার ক্ষেত্রে। এতে একইসাথে মূল পুস্তকের স্বাদ, গঠন, বর্ণনারীতি অক্ষুণ্ণ রাখতে হয়। আবার এর সঙ্গে যোগ রাখতে হয় নিজ ভাষার যথাযথ শিল্প সমতার। বিজ্ঞজন মাত্রই এ সত্য স্বীকার করবেন। ফলত এটা একেবারে অস্বাভাবিক নয় যে, তরুণ এই অনুবাদকের কিছু সূক্ষ্ম ভুল-ত্রুটি রয়ে যাবে। এই দুরূহ কাজে কিছু ব্যর্থতা অস্বাভাবিক কিংবা অভূতপূর্ব নয়। পুস্তিকাটির যা ধরন তাতে কিছুক্ষেত্রে জটিল অনুবাদের হয়ত বিকল্প ছিল না। এই অনূদিত পুস্তিকায় কিছু লুপ্তপ্রায় সংস্কৃত শব্দের চমৎকার ব্যবহার রয়েছে। আছে চলিত শব্দের রকমারি ব্যবহারও। এই অনূদিত পুস্তিকাটিতে অনুবাদকের সবচে’ বেশি মুন্সিয়ানার পরিচয় মেলে মূল পুস্তিকার অনেক ‘অপরিচিত’, ‘অস্পষ্ট’ বিষয়কে টীকা সংযোজনের দ্বারা পরিচিত উপস্থাপনের মাধ্যমে স্পষ্ট ও সহজবোধ্য করে তোলার ক্ষেত্রে। টীকা সংযোজনে যথার্থতা, টীকায় প্রদেয় তথ্যের ব্যাপ্তি এই পুস্তিকার অনুবাদককে— অনুবাদের পরিচিত পরিচয়ের বাইরে স্বার্থক ‘ব্যাখ্যাকারক’ হিসবেও দাঁড় করিয়েছে। সে অর্থে অনুবাদক আলী হাসান উসামা এই পুস্তিকার ব্যাখ্যাকারকও। বাংলাদেশে অনুবাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা দুর্লভ। আলী হাসান উসামা অনূদিত ‘মাযহাব বিরোধিতার খণ্ডন’ এবং ‘শাসকের দরবারে আলিমদের গমনাগমনে সতর্কবাণী’ বইয়েও তার একই ধারা লক্ষ করা গেছে, যা রীতিমতো প্রশংসার দাবিদার। বইটি পাঠ করলে একজন পাঠক ইসলামের দণ্ডবিধির পরিচিতি, প্রকার, তার যথার্থতা এবং উপযোগিতা, সমকালীন প্রেক্ষাপটে তা বাস্তবায়নের গুরুত্ব এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উত্থাপিত অভিযোগ-আপত্তির জ্ঞানগর্ভ সমাধান সম্পর্কে অবগত হবে ইন শা আল্লাহ। বইটি ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। সংক্ষিপ্ত বিধায় পাঠেও বিরক্তির ছোঁয়া নেই। লেখক তার লেখায় কোনো বাহুল্য রাখেননি, ফলে তা সুখপাঠ্য। তবে বইটি যেহেতু তাত্ত্বিক, তাই পরিসর ছোট হলেও তা হৃদয়ঙ্গম করাটা অবশ্যই পরিশ্রমের কাজ এবং সময়সাপেক্ষ। বইটিতে অতিরিক্ত যোগ করা হয়েছে— প্রাসঙ্গিক কিছু শিরোনাম, প্রয়োজনীয় কতক টীকা, লেখক ও অনুবাদক পরিচিতি, অনুবাদকের পক্ষ থেকে সংযোজিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, প্রখ্যাত অনুবাদক আবদুল্লাহ আল ফারুকের মূল্যায়ন এবং একজন নিরপেক্ষ বিশ্লেষকের চোখে বইটির অনুবাদের গুণগত মান সংক্রান্ত বর্ণনা।
আরববিশ্বের প্রখ্যত আলিম ও ফকিহ। জন্ম তুরস্কে। দ্বীনি শিক্ষা ও দাওয়াতের স্বার্থে আমৃত্যু বসবাস করেছেন সিরিয়ার দিমাশক শহরে। তিনি ছিলেন মসজিদে বনু উমাইয়ায় সম্মানিত খতিব, দিমাশক বিশ্ববিদ্যালয়ে কুল্লিয়ায়ে শরিয়ার ডিন। তার রচিত গ্রন্থসংখ্যা ৬০ টি। তবে ‘ফিকহুস সিরাহ’ রচনার মাধ্যমে তিনি অনন্য উচ্চতায় সমাসীন হন। এটি আরববিশ্বে সর্বাধিক আলোচিত, পঠিত ও সমাদৃত সিরাতের কিতাব।