‘সুবহে সাদিক: আধ্যাত্মিক ও আত্মোন্নয়ন ভাবনা’ গ্রন্থটি সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ে আত্মোন্নয়ন প্রক্রিয়ার ভূমিকা প্রসঙ্গে মানব জীবনের লক্ষ্য, মুমিন জীবনের মিশন, তাযকিয়ার পূর্বশর্ত ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। জিকির শব্দের অর্থ, তাৎপর্য ও জিকিরের পন্থাবলী আলোচিত হয়েছে দ্বিতীয় অধ্যায়ে। আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং এ সম্পর্ক উন্নয়নের উপায়সমূহ এবং আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বাধাসমূহ আলোচিত হয়েছে গ্রন্থটির তৃতীয় অধ্যায়ে। চতুর্থ অধ্যায়ে রসুল সা.-এর সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, সুন্নাতের প্রকৃত অর্থ এবং বর্তমান সময়ে সুন্নাহর গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায়ে আল্লাহর সাথে আখেরাতে চূড়ান্ত সাক্ষাৎ ও তার প্রস্তুতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। সবশেষে আত্মশুদ্ধি বিষয়ে সহায়ক গ্রন্থের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। অনুবাদের ক্ষেত্রে শাব্দিক অনুবাদ না করে ভাবানুবাদ করা হয়েছে। শ্রুতি মাধুর্য্যরে জন্য এ গ্রন্থের নাম করণ করা হয়েছে ‘সুবহে সাদিক’। গ্রন্থটি ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ও গ্রুপ স্টাডি উভয় ধরনের পাঠের জন্যই উপযোগী। গ্রন্থটি উপমহাদেশের ইসলামি সমাজ সংস্কারের অন্যতম পথিকৃত খুররম মুরাদ-এর কতগুলো ভাষণের ইংরেজি সংকলন ‘In the Early Hours’-এর বাংলা অনুবাদ। অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় গ্রন্থটির অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট অনুবাদক অধ্যাপক ড. আবু খলদুন আল-মাহমুদ এবং ড. শারমিন ইসলাম মাহমুদ। ইসলাম মানব জাতির জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামে রয়েছে মানব জীবনের সকল পর্যায়ের একটি সুন্দর দিক নির্দেশনা। একদিকে মানুষের আত্মোন্নয়ন, সমাজ উন্নয়ন ও বিশ্ব মানবতার সার্বিক উন্নয়নে ইসলামের যেমন রয়েছে এক অনন্য ভূমিকা, অন্যদিকে তেমনি একজন মুমিনের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। জনাব খুররম মুরাদ তাঁর এ গ্রন্থটিতে আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক, আল্লাহর রসুল সা. এর সাথে সম্পর্ক, আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক, আল্লাহ তায়ালার পথে ব্যয় এবং সার্বক্ষণিক জিকিরের মাধ্যমে কীভাবে সেই কাংখিত লক্ষ্য (Ultimate goal is to seek the pleasure of Allah) অর্জন সম্ভব- তার একটি বিশদ বর্ণনা সাবলিলভাবে উপস্থাপন করেছেন। খুররম মুরাদ উপমহাদেশের ইসলামি পুনর্জাগরণে এক প্রবাদ পুরুষ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এ মনীষী ১৯৭০ সালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ঢাকা কেন্দ্রের সচিব ছিলেন। তাঁর সাহচর্যে সমৃদ্ধ হয়েছেন ইসলামি পুনর্জাগরণে নিবেদিত অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি, যারা উপমহাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসলামি জাগরণে ভূমিকা রাখছেন। বর্তমান গ্রন্থটি কতকগুলো ভাষণের সংকলন, যা তিনি ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে দিয়েছিলেন। গ্রন্থটির সংকলক রিযা মুহাম্মদ।
তিনি ১৯৩২ সালে ভারতের ভূপালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তাঁর পরিবার লাহোরে চলে আসেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন। একজন পাকিস্তানী ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক। খুররম জাহ মুরাদ এশিয়ার একজন বিখ্যাত প্রকৌশলী। একই সাথে তিনি ছিলেন দা’য়ী, সংগঠক, ছাত্রনেতা, হাদীস বিশারদ, ইসলামিক চিন্তাবিদ এবং সেরা প্রকৌশলী। খুররম জাহ মুরাদ করাচির NED University of Engineering and Technology থেকে পুরকৌশল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একই বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন University of Minnesota থেকে। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাকিস্তানের বহু উন্নয়ন কাজ ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার সাথে যুক্ত ছিলেন। আইয়ুব খানের আমলে ১৯৬৫ সালে মাতুয়াইল, মুসলিম নগর, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানাসহ ৫৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বন্যামুক্ত এলাকা গড়তে প্রতিষ্ঠা করা হয় ডিএনডি বাঁধ। এই প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন খুররম জাহ মুরাদ। ১৯৭৫ সালে সৌদি বাদশাহ পবিত্র কাবা ঘরের এক্সটেনশন কাজ শুরু করেন। এই কাজের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন খুররম জাহ মুরাদ। তিনি এর জন্য কোন পারিশ্রমিক গ্রহন করেন নি। এই বদান্যতার পুরস্কার হিসেবে মসজিদুল হারামের আটটি দরজার মধ্যে একটি দরজা ইঞ্জিনিয়ার মুরাদের নামে নামকরন করা হয়েছে। দরজাটির নাম 'বাবে মুরাদ'। ১৯৯৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।