একবিংশ শতাব্দিতে এসে প্রচলিত অর্থশাস্ত্র সম্পর্কে মানুষকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। মুসলমান পণ্ডিতগণই শুধু নয়, অনেক অমুসলিম অর্থশাস্ত্রবিদও বর্তমানে প্রচলিত অর্থশাস্ত্রের অক্ষমতা, ব্যর্থতা ও ভুল-ত্রুটি সম্পর্কে কেবল সচেতনই হননি, প্রচলিত অর্থশাস্ত্র বাতিল করে এ বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করার দাবীও তুলেছেন। দু'শত বছর যাবৎ গড়ে তোলা প্রচলিত অর্থশাস্ত্রে সবই কি ভুল? অবশ্যই তা নয়। তবে, অনেক ভ্রান্ত-নীতি ও ভ্রান্ত-দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রচলিত অর্থশাস্ত্র মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বখ্যাত ইসলামি অর্থশাস্ত্রবিদ ড. এম ওমর চাপরা তার লিখিত The Future of Economics: An Islamic Perspective গ্রন্থে ইবনে খালদুনসহ প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদগণের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের আলোকে এ জাতীয় সমস্যার স্বরূপ বিশ্লেষণ ও সমাধানের দিক নির্দেশনা দিয়েছে। সমসাময়িক মুসলিম বিশ্বে একজন নেতৃস্থানীয় প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ওমর চাপরা বইটিতে একটি নতুন পথ দেখিয়েছেন। বইটি কেবল মাত্র ইসলামি অর্থশাস্ত্রীয় রচনাবলীর জন্য একটি মৌলিক অবদান শুধু নয়, বরং সমসাময়িক অর্থনৈতিক বিতর্কেও এটি একটি মৌলিক অবদান। গভীর পান্ডিত্যপূর্ণ ও সৃজনশীল চিন্তার ফসল এ বইটি মুল ধারার অর্থশাস্ত্রের এক শক্তিশালী অথচ ভারসাম্যপুর্ণ সমালোচনা, এবং, অর্থশাস্ত্রকে তার ইহজাগতিক ও পাশ্চাত্য কেন্দ্রিক খোলস থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে এক শক্তিশালী আবেদন। মানবতার সেবায় ব্যবহার করার জন্য অর্থশাস্ত্রকে নৈতিক ও সাম্যবাদি সংশ্লেষের সাথে পুণ: সম্পর্কিত করার পক্ষে তিনি এক বিশাল যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। এ বইটি যে বার্তা বহন করছে তা হচ্ছে যে, মানব জাতির জন্য উপযোগী একটি ন্যায় ভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্থার সন্ধানে অর্থশাস্ত্রের যেমন প্রয়োজন ইসলামি দৃষ্টিকোন থেকে নৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন, নিজেদের জীবনে নতুন কোন অধ্যায় শুরু করতে চাইলে মুসলিম উম্মাহ'রও তেমনি প্রয়োজন অর্থশাস্ত্রের ইতিহাস ও তাদের নিজেদের ত্রুটি সম্পর্কে আরো বেশী মনযোগী হওয়া। আমাদের সকলকে অবশ্যই রুঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং আকাশকুসুম কল্পনা ও সহজ ফাঁকাবুলি আওড়ানো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। বাংলা ভাষা-ভাষি পাঠকদের মধ্যে এ জাতীয় গ্রন্থের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ প্রেক্ষিত সামনে রেখেই গ্রন্থটির ভাষান্তর উপস্থাপন করা হয়েছে। গ্রন্থটির বিষয়বস্তু পাঠকদের চিন্তার জগতকে নাড়া দেবে এবং তাদেরকে আলোকিত মানুষ হতে সাহায্য করবে।
ড. মাহমুদ আহমদ ১৯৬০ সালে লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ইরানে ব্যাংকিং প্রশিক্ষণ লাভ করেন। তিনি সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থায় ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এ দশ বছর ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন। বর্তমানে একটি প্রাইভেট ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি দেশে বিদেশে অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি আইডিবি’র আমন্ত্রণে মিশর, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ব্রুনাই দারুস্সালাম, আবুধাবী, দুবাই ও সৌদি আরব ভ্রমণ করেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামি ক্ষুদ্র ঋণের আইডিবি কনসালট্যান্ট। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট (বিআইআইটি) ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির আজীবন সদস্য এবং অন্যান্য দেশী-বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। লাহোর স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে প্রকাশিত ‘দি লাহোর জার্নাল অব ইকোনমিক্স’-এর সম্পাদকীয় উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য। দেশী-বিদেশী প্রফেশনাল জার্নালে তাঁর তেইশটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।