‘ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক' বইটি ডঃ আবদুলহামিদ আহমাদ আবুসুলাইমান রচিত Towards an Islamic Theory of International relations বইটির বাংলা অনুবাদ। মানুষে মানুষে জাতিতে জাতিতে হানাহানির বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই বইটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা রাখবে। এ বইতে মুসলিম চিন্তাধারায় যে সংকট রয়েছে তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কুরআন এবং সুন্নাহর নীতিমালাকে সঠিকভাবে কার্যকর যোগাযোগের জন্য কিভাবে প্রয়োগ করা যায় তা উদ্ভাবনের জন্য তিনি ইসলামী চিন্তাবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রসারে ইসলামের শিক্ষাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশী উপযোগী কারণ ইসলাম প্রকৃতভাবেই গ্লোবাল বা আন্তর্জাতিক ৷ মানুষে মানুষে, গোত্রে গোত্রে, জাতিতে জাতিতে ঐক্যের যে মূলনীতি ইসলাম পেশ করেছে- তা কাংখিত বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একান্ত প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়টি বিশ্বমানবতার ঐক্য ও সংহতির প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমগ্র পৃথিবীর মানুষ ভাই ভাই, একই স্রষ্টার সৃষ্টি। এ পৃথিবীতে আমাদের জীবন, জন্ম, মৃত্যু, হাসি, কান্না, যে পৃথিবীতে আমরা বাস করি, যেখান থেকে জীবিকা পাই, যে আলো বাতাস ভোগ করি তার সব কিছুর মধ্যে অনৈক্যের চেয়ে ঐক্যের উপাদানই বেশী পরিদৃষ্ট হয়। কিন্তু আমাদের জ্ঞান, উপলব্ধি ও দৃষ্টির সংকীর্ণতার জন্য আমরা ঐক্যের পরিবর্তে অনৈক্যের উপাদানগুলোকেই বেশী বিকশিত করে বিশ্ব মানবতার সম্পর্ক ও শান্তিকে বিনষ্ট করেছি। স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক থেকে উৎসারিত সম্পর্ক ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয় পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। বস্তুতঃ আল্লাহর নবীগণ সত্য, ন্যায়-নীতি, এবং পরস্পরের বিপর্যপ্ত সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করার জন্য যুগে যুগে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এজন্য পবিত্র কুরআনে মানব সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তি, নীতিমালা ও আদর্শ রয়েছে। এসবের অনুসরণ ও অনুশীলনের মধ্যেই মানুষে মানুষে উন্নততর সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত এ সংক্রান্ত নীতিমালা স্থান কাল পাত্র ও প্রেক্ষিত বিচারে উপলব্ধি করতে হবে। সাম্প্রতিককালে একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিবেক সোচ্চার হচ্ছে। ইতোপূর্বে এলক্ষ্যে বিকশিত ‘বিশ্বসমাজ আদর্শ’ 'লীগ অব নেশনস' এবং ‘কমিউনিজম’ স্বীয় আদর্শিক দুর্বলতার ফলশ্রুতিতে মুখথুবড়ে মরেছে। একই কারণে বর্তমান জাতিসংঘের অবস্থাও তেমন আশাপ্রদ নয়। বর্তমান পৃথিবীর জন্য প্রয়োজন এমন এক ব্যবস্থা যার পতাকা তলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও অঞ্চল নির্বিশেষে সকল মানুষ যাবতীয় বৈধ অধিকার নিয়ে শান্তিতে ও স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবে। এরূপ একটি ব্যবস্থার সন্ধানে ব্রতী হলে চিন্তাশীল মানুষের স্মৃতিপটে যে রূপরেখা উদ্ভাসিত হবে সেটি কেবল ইসলামের কালজয়ী আদর্শ থেকেই উৎসারিত হতে পারে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ্র চিন্তাধারায় সুদীর্ঘকালের স্থবিরতা, সনাতন (Classical) যুগের প্রেক্ষিত বিবর্জিত ফিকহ্ এর কতিপয় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ এ কালজয়ী আদর্শের বিশ্বজনীন রূপকে বিভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে রেখেছে। এ থেকে উৎরিয়ে কাঙ্খিত বিশ্ব ব্যবস্থার আইন কাঠামো ও মূল্যবোধ বিনির্মাণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করার জন্য দিক নির্দেশনা রয়েছে এ বইতে। যেটি থেকে বাংলা ভাষাভাষী অনুসন্ধিৎসু পাঠকবর্গ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে আধুনিক চিন্তা বিকাশের উপাদান পাবেন।
আব্দুলহামিদ আহমদ আবুসুলাইমান প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আব্দুলহামিদ আহমদ আবুসুলাইমান। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামি পণ্ডিত, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ এবং ইসলাম ও ইসলামী সংস্কার বিষয়ক বিভিন্ন বই ও নিবন্ধের লেখক। ১৯৩৬ সালে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৫৯ সালে বাণিজ্যে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি ব্যাচেলর অফ আর্টস ইন কমার্স এবং ১৯৬৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি মাস্টার অফ আর্টস ইন পলিটিক্যাল সায়েন্স লাভ করেন। পরবর্তীতে দশ বছর পর ১৯৭৩ সালে তিনি আমেরিকার প্যানসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ডক্টরেট (ডক্টর অফ ফিলোসফি) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৩-১৯৬৪ সালে সৌদী আরবের স্টেট প্লানিং কমিটির সেক্রেটারী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদের কিং সউদ ইউনিভার্সিটিতে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপরে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যান। ১৯৮৮-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার (আইআইইউএম) রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার রেক্টারি চলাকালীন আইআইইউএম উচ্চ বিদ্যালয়ের মানসম্পন্ন মাদ্রাসা থেকে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়, যেখানে একটি নতুন ক্যাম্পাসে ১৫,০০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, যা কার্যকরী আধুনিক ইসলামী স্থাপত্যশাস্ত্রে একটি যুগান্তকারী হিসাবে বিবেচিত হয়। এ ছাড়া তিনি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এসোসিয়েশন অব মুসলিম সোস্যাল সাইন্টিস্টস (এএমএসএস)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৩-১৯৭৯ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামী)-এর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট (আইআইআইটি) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজ-এর চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। অসংখ্য আন্তর্জাতিক একাডেমিক কনফারেন্স ও সেমিনার আয়োজনে গবেষক হিসেবে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। মালয়েশিয়া ও সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি তার সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে আইআইইউএম এর কুল্লিয়াহ অব ইসলামিক রিভিল্ড নলেজ এন্ড হিউম্যান সাইন্সেস অনুষদের সাথে তার নাম যুক্ত করা হয় (এএইচএএস কেআইআরকেএইচএস)। এর আগে ২০০৮ সালে আইআইইউএম তাকে শিক্ষায় দর্শন বিভাগের সম্মানসূচক ডক্টর ডিগ্রি প্রদান করে। মুসলিম সমাজের সংস্কার এবং সংশোধন নিয়ে ছিল তার চিন্তা ও ধ্যান-জ্ঞান। জ্ঞান, শিক্ষা ও চিন্তার পুনর্গঠনে এবং মুসলিম উম্মাহ’র সংস্কার ও জাগরনে তিনি বেশকিছু মূল্যবান পুস্তক ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো- The Islamic Theory of International Relations: New Directions for Islamic Methodology and Thought; Theory of Economics: Philosophy and Contemporary Means; Islamization of Knowledge: IIUM as a Model; Azmat al-Iradah wa-al-wijdan-al-Muslim; Azmat al Aql al Muslim; The Crisis of Muslim Will and Spirit (2004); Marital Discord: Recapturing Human Dignity Through the Higher Objectives of Islamic Law; Reform of Modern Islamic Thought in the Case of Criminal Law; Punishment for Apostasy in Islam with regard to ‘Aqida and Islamic Law’; A Smart Monkey that Couldn’t Count (Persuasive story); Builders’ Island: for Children and Adolescents; Hidden Treasure of Builders’ Island; “Amazon Booklist: Abdul Hamid Abusulayman.” Retrieved 6 May, 2016.