মানববিজ্ঞানকে বর্তমান অবস্থায় উন্নীত করে তোলার ক্ষেত্রে অথবা প্রাধান্যময় বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে পশ্চাৎপদ করে রাখা থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক অবস্থা বাস্তবায়নের বিষয়টি যেভাবে এগিয়ে গিয়েছে নীতিসঙ্গত অথবা নীতিবিগর্হিত বিষয়ে মানদণ্ড সম্বন্ধীয় বিরোধ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পক্ষে সহায়ক অবস্থা আজ পর্যন্ত এগিয়ে যায়নি। দর্শনের ঊষালগ্ন থেকেই মূলত একই বিষয়সংক্রান্ত পরম উদ্দেশ্য (Summum Bonum) অথবা নৈতিকতার ভিত্তির প্রশ্নটি অনুধ্যানমূলক গবেষণার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত হয়ে আছে। অধিকাংশ সহজাত ধীসম্পন্ন ব্যক্তি এ সমস্যা সমাধানে নিজেদের নিয়োগ করেন, এবং তাঁরা নানা গোষ্ঠী ও চিন্তাধারায় বিভক্ত হয়ে একে অপরের সাথে প্রচণ্ডভাবে তর্ক-বিতর্কে নেমে পড়েন। তবু কিন্তু সেই যখন যুবক সক্রেটিস (Socrates) বৃদ্ধ প্রোটাগোরাসের (Protagoras) বক্তব্য শুনতেন আর তথাকথিত সোফিস্টদের (the Sophists) জনপ্রিয় নৈতিকতার বিরুদ্ধে উপযোগবাদী মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করতেন (যদি প্লেটোর সংলাপটি বাস্তব আলোচনার ভিত্তিতে রচিত হয়ে থাকে), সে তখন থেকে আজ দুহাজার বছর উত্তীর্ণ হবার পরও দার্শনিকেরা একইভাবে নানা প্রকারের বিরোধী মতাবলম্বী পতাকাতলে সমবেত হয়ে আছেন। এ দীর্ঘকালের বিতর্কের পরও আজ পর্যন্ত এ বিষয়বস্তুটি আলোচনা করতে গিয়ে চিন্তাবিদরা অথবা সমগ্র মানবজাতি মতৈক্যের বিন্দুমাত্র নৈকট্যে পৌঁছতেও সক্ষম হয় নি।
অধ্যাপক ড. হাসনা বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন। দশম শ্রেণীতে উঠতেই মাত্র চৌদ্দ বৎসর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরের বৎসর মায়ের একান্ত অনুরােধে ১৯৫০ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দেন এবং কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তারপর সুদীর্ঘ তেরােটি বৎসর সংসারধর্ম পালন করেন। ছয় সন্তানের জননী হাসনা বেগম আবার ঢাকা সিটি নাইট কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৬৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেন এবং স্কলারশীপসহ প্রথম বিভাগ পান। এরপর তাকে আর কিছু থামাতে পারেনি। সংসারের যাবতীয় কর্তব্য পালন করে তিনি দর্শনে বিএ অনার্স ও এমএ পাস করেন। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন দুইটি পরীক্ষায়। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে প্রভাষক পদে যােগদান করেন। এরপর ১৯৭৩-এ তিনি অস্ট্রেলিয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যান। ১৯৭৮-এর এপ্রিল মাসে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যােগদান করেন।