“...প্রত্যেক জাতির নিজস্ব রূপকথা আছে। বিভিন্ন দেশের রূপকথার মধ্যে যেমন মিল অনেক, তেমনি তফাৎও প্রচুর। ভারতীয়, ইংরেজি, রাশিয়ান, জার্মান, ফরাসি, চীনা রূপকথার পার্থক্য খুব সহজেই ধরা যায়। কেননা সাধারণ লােকের জীবনযাত্রা, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং যে দেশে গল্পগুলি জন্ম লাভ করে পুরুষানুক্রমে হাত বদলের ফলে বর্তমান আকৃতি লাভ করেছে, রূপকথায় সে সব কিছুর সুস্পষ্ট ছাপ থেকে যায়... । এই সব কাহিনির বেশিরভাগই যখন প্রথম বলা হয়েছিল, তারপর বহু শতাব্দী পার হয়ে গেছে। যারা কাহিনি বলেছে তারা তাদের পছন্দমত, তাদের ইচ্ছানুসারে এদিক ওদিক বাড়িয়ে নতুন কিছু যােগ করে নতুন রূপ দিয়েছে। কাহিনিগুলাে যত পুরনাে হয়েছে, ততই বেশি মনােগ্রাহী হয়েছে, আর তাদের শিল্পগুণও বেড়েছে। শত শত বছর ধরে লােকেরা মেজে-ঘষে তুলির নানা টানে এদের একেবারে নিখুঁত করে তুলেছে।... সবচেয়ে কাব্যময় আর আনন্দের হলাে রূপকথাগুলাে। এরা আমাদের অপরূপ কল্পনার জগতে নিয়ে যায়। মনে হয় এই সব রূপকথার ভিত্তি কেবল কল্পনা আর স্বপ্ন। অমঙ্গলের বাহনদের সঙ্গে এই সব রূপকথার যে বীর-নায়করা যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা কেউই সাধারণ জগতের নিয়মে বাধা নন। কিন্তু তবু এই সব কিছুর ভেতরে মানুষের সত্যিকার স্বপ্ন ফুটে উঠেছে। এই রূপকথাগুলির বীর-নায়কেরা লােকপ্রচলিত আদর্শের মূর্তি। তারা সবসময়ই নির্ভীক, দুঃসাহসী, মহৎ, অমঙ্গলকে তারা জয় করবেনই।... উপকথা পড়তে ছােটদের চেয়ে বড়রাও কিছু কম ভালােবাসে না। কারণ এইসব গল্পের ভাষার সৌন্দৰ্য্য, নায়কদের মােহনীয়তায় মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। আকৃষ্ট না হয়ে পারা যায় না তাদের মর্মবাণীতে-কেন না এই সব গল্প দেশকে ভালবাসতে শেখায়, সাধারণ মানুষের শক্তিতে আস্থা রাখতে বলে, উন্নত ভবিষ্যত এবং মন্দের উপর ভালাের জয়ের প্রত্যয় গড়ে তােলে।”