শরৎচন্দ্রের একটি প্রধান উপন্যাস। এই বইয়েতে সমাজ-সমস্যা বলে যাকে মনে করা হয় তা আসলে একটি ব্যক্তিগত সমস্যা। গল্পের চারধারে সমাজ আছে, হিন্দু-ব্রাহ্ম মনোভাবের কিঞ্চিত সংঘাতও আছে। কট্টর হিন্দুয়ানি আছে। এগুলি কাহিনীর পটভূমি, তা ছাড়া ব্যক্তি তো সমাজ ছাড়া নয়। সমাজের সঙ্গে বিচিত্র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যক্তির ভাবনা- যন্ত্রণা-আনন্দ-আতঙ্ক। ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে যে বন্ধন বা বন্ধন-ছেদ তাও সমাজ-সম্পৃক্ত। তাই বলে যে সমস্যা ও সংকট ব্যক্তির তাকে ব্যক্তি-নিরপেক্ষ সমাজ-সমস্যা বলে মনে করা থেকে বিরত না হলে সাহিত্যের সত্য হারাতে হয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে জীবনের সত্যও। শুরুতে এই কথাগুলি বলার প্রয়োজন বোধ করছি, কারণ নারীর অবৈধ প্রেমকে সামাজিক সমস্যারূপে দেখার প্রবণতা আমাদের সাহিত্য-জগতে খুবই বেশি এবং গৃহদাহের মত উপন্যাসের আলোচনায় সতীত্ব ও নৈতিকতার দিক থেকে সমাজ নিয়ে প্রায়ই টানাটানি হয়ে থাকে। ঐ ভুল দেখা থেকে নিবৃত্ত হবার জন্য গোড়া থেকে এই সব কথা বলে সতর্ক হচ্ছি। গৃহদাহের কেন্দ্রে যে সমস্যা তা তিনটি নরনারীর, তারা যা করেছে বা করতে বাধ্য হয়েছে, তার মধ্যে সমাজ নানাভাবে আছে। কিন্তু আছে ব্যক্তিগত হয়ে। এদের তিনজনের চারধার যে সমাজ তা একই রকম। ধরা যাক তার চিহ্ন-স। স্থানে-কালে সুনির্দিষ্ট হলেও স- নৈর্বক্তিক। তবে সমাজ তো শুধু নৈর্বক্তিক হয়ে বাইরে পড়ে থাকে না। প্রতিটি মানুষ সচেতনে-অচেতনে নিজ নিজ স্বভাব ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে সমাজকে বহন করে- নিজের মত করে। যে সমাজকে অগ্রাহ্য করে সেও সমাজবাহী।