"হে আমার মেয়ে"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: হে আমার মেয়ে! তােমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনায় এই নসীহতগুলাে, তাই গভীর মনােযােগ দিয়ে পড়বে। বারবার অধ্যয়ন করবে। হৃদয়ের গভীরে দৃঢ়তার সাথে প্রতিস্থাপনের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাবে। মনে রেখাে! এগুলাে তােমার জীবনের পাথেয়। সুন্দর, স্বচ্ছ ও নির্মল আগামী বির্ণিমানের অন্যতম নেয়ামত। হে আমার মেয়ে! আজ আমি চল্লিশের কোঠা পার হয়ে পঞ্চাশের কোঠায় উপনীত এক প্রৌঢ়, যৌবনকে বিদায় দিতে যাচ্ছি, সেও আমার থেকে বিদায় নিতে চায়। নতুন কোন স্বপ্ন এখন জাগ্রত হয় না। নতুন দিনের নতুন স্বপ্ন দেখার মানসিকতাও আর তৈরী হয় না। জাগ্রত হয় না কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আমি দেশ দেশান্তরে ভ্রমণ করেছি, অনেক দেশ ওঁ শহর ঘুরেছি। বহু জাতির সাহচর্য লাভ করেছি এবং তাদের কৃষ্টি-কালচারের সাথে পরিচিত হয়েছি। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে অনেক ধারণা অর্জন করেছি। তাদের উত্থান পতন স্বচক্ষে দেখেছি। আজ আমার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শােননা। কথাগুলাে সত্য-সঠিক ও সুস্পষ্ট। মূল্যবান মতি তুল্য। এগুলাে আমার বয়স ও অভিজ্ঞতার আলােকেই তােমাকে বলছি। আমি ছাড়া অন্য কেউ তােমাকে এগুলাে বলবে না। শােনাবে না এমন মূল্যবান কথা। করবে না এমন অমূল্য নসীহত। মিম্বার-মিহরাবে ও সমাবেশে দাঁড়িয়ে আমি অনেক ভাষণ দিয়েছি। অনেক নসীহত পেশ করেছি। অশ্লীলতা ছেড়ে দিতে এবং উত্তম চরিত্র অর্জনের আহ্বান জানিয়েছি। সকল প্রকার অন্যায় কাজ বর্জনের ডাক দিয়েছি। নারীদেরকে ঘরে ফিরতে ও কুরআনের সুপ্রশিদ্ধ বিধান পর্দার আবরণে আবৃত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। আমি অনেক লিখেছি। লিখতে লিখতে কলম এখন দুর্বল হয়ে গেছে। ঝিমিয়ে পড়েছে কবজির শক্তি।
বিংশ শতাব্দীর এক সমাজচিন্তক দার্শনিক ড. শায়খ আলী তানতাবী। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেশক নগরীতে তাঁর জন্ম। পৈত্রিক আবাস মিসরের তানতা শহর হওয়ায় তানতাবী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ছাত্রজীবনেই তুখােড় মেধার কারণে তিনি গবেষক শিক্ষকগণের দৃষ্টি কাড়েন। সেকালে গবেষণা ও জ্ঞানসাধনায় তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ঈর্ষণীয়। সেই পরিবারেই তিনি ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করে ঐতিহ্যের তিলকে সােনার প্রলেপ আঁটেন। সতেরাে বছর বয়স। থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প প্রকাশ হতে থাকে। ১৯৩৬ সালে সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ইরাক গমন করেন। সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পর দামেশকে ফিরে এসে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে যােগ্যতার সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। আর লেখালেখি! সে তাে তার নেশা। এ নেশা তার মজ্জার সাথে মিশা। একটু সময় পেলেই এ চিন্তাবিদ কাগজ কলম হাতে লিখতে বসে যেতেন। তাঁর জ্ঞানের নিগুঢ় চশমায় ধরা পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা অসঙ্গতির কালাে পাহাড়। সেই অমানিশা দূর করতে তিনি। জ্বালান নানান রঙের জ্ঞানের মশাল। সেই আলােয় বিদুরিত হয় শত প্রকারের। আঁধার-অজ্ঞানতা; সম্বিৎ ফিরে পায়। হতাশাচ্ছন্ন জাতি। গবেষণামূলক লেখালেখির খ্যাতির মধ্য দিয়ে তিনি মক্কা মােকাররমা শরিয়া কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধানমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখা, বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ প্রণয়ন আর বিভিন্ন মাদরাসা-কলেজে দরসদানও চলতে থাকে সমান গতিতে। ১৯৯৯ সালে ৯০ বছর বয়সে এ শায়খ মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন।