ভূমিকা শোষক ও শোষিতের ইতিহাস কাল থেকে কালাতীত দেশ থেকে দেশাতীতে আলাদাভাবে লিখিত কিংবা ভাষিক ও দালিলিক ক্ষেত্রে ভিন্নমাত্রিক হলেও শোষণের আভিধানিক অর্থ এক ও অভিন্ন। ভৌগোলিক-রাজনৈতিক-সামাজিক কারণে কলম্বিয়ার দুরত্ব বাংলাদেশ থেকে অনেক হলেও সামাজিক আন্দোলন, বিদ্রোহ, সংগ্রাম কিংবা জীবনাচরণের অনেকক্ষেত্রেই এই দুই দেশের মানুষের অস্তিত্ব সংকটের মর্মার্থ সমানুপাতিক। দরিদ্র কলম্বিয়ার সামারিক শাসন, গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ এবং সামাজিক নৈরাজ্যের মর্মস্পর্শী বর্ণনার সঙ্গে বাংলাদেশের একাধিক আন্দোলন ও সংগ্রামের সাযুজ্য লক্ষণীয় -শোষণ ও দমন পীড়ন তো আছেই।
চরম বিরূপ প্রতিবেশে অস্তিত্বের সংগ্রামে যুধ্যমান জাতির জাতিসত্তা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে সেই জাতির যাপিতজীবনের তথ্যাবলি সমগ্র বিশ্বের সমকালীন এবং পরবর্তী প্রজন্মের জানা দরকার। সেদিক বিবেচনায় নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক মার্কেস এর জীবন ও সংগ্রাম পাঠ করা সংস্কৃতিসেবীর কাছে অগ্রগণ্য। মার্কেসের জীবন-কর্ম-সংগ্রাম, ব্যক্তিজীবন ও পরিপার্শ্বের দালিলিক রচনা ‘বেঁচে আছি গল্পটা বলবো বলে’র অনুবাদ বাংলা ভাষী পাঠক ও লেখকদের সামান্য কাজে লাগবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা-সর্বোপরি বাঙালি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। মাথা উঁচু করে পথচলার সাহস পাই- একই সঙ্গে এতবড় অর্জন পৃথিবীর ইতিহাস ও সভ্যতার ধারাক্রম বিচারে আমাদের অভিভূত করে- আমরা গ্লানিমুক্ত হই, আলোকিত হই ত্যাগে। সেদিক বিবেচনায় স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য কাজ করা অবশ্যকর্তব্য। সেই বিবেচনাবোধ থেকেই বিশ্বসাহিত্যের কালজয়ী লেখক মার্কেস এর ‘বেঁচে আছি গল্পটা বলবো বলে’র পরিমার্জিত প্রথম ‘নান্দনিক’ সংস্করণ প্রকাশিত হলো। জীবনের চরম সত্যের অনুষঙ্গ মিলিয়ে দেখা কিংবা কলম্বিয়ার মানুষের যাপিত জীবনের সঙ্গে বাংলাদেশের ও বাংলা ভাষাভাষীর সাযুজ দেখার এই আয়োজনে ‘নান্দনিক’ এই কালজয়ী গ্রন্থের অনুবাদক তপন শাহেদকে স্বাগত জানাই।
স্বাধীনতার দায়বদ্ধতা এবং সীমাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতা জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ শেখায়। আর ‘নান্দনিক’ প্রতিষ্ঠাতা লেখক-রাজনীতিক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী গ্রন্থ প্রকাশে সীমাহীন স্বাধীনতা দিয়ে এবং প্রকাশক লায়লা সিদ্দিকী সৃজনশীল মৌনতা প্রকাশ করে অদৃশ্য শৃঙ্খলার জালে আবদ্ধ করেন বার বার। ‘নান্দনিক’ এর পক্ষ থেকে সকলের জন্য শুভেচ্ছা।
Title
বেঁচে আছি গল্পটা বলবো বলে (পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের বই)