‘জমিদার’ শব্দটি ভুমির অধিকর্তাকে বুঝায় (দুটি ফার্সী শব্দ ‘জমি’ বা ‘জমিন’ এবং ‘দার’ অর্থাৎ অধিকারিক; ভূমির উপর যার অধিকার)। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর কোন স্পষ্ট অর্থ নেই। শাব্দিক অর্থে জমির মালিককে বোঝালেও তার অধিকার স্পষ্ট নয়। জমিদারী অধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তি উক্ত জমির মালিক নন, এটি একটি পদ, যাতে তিনি উৎপাদিত পণ্যের ভাগ গ্রহণ করেন। মোগল সাম্রাজ্যের প্রচলিত ধারা অনুযায়ী জমিদার এমন একজন ব্যক্তি যিনি জমির এক অংশ ভোগ করেন এবং সরকারের কাছে উৎপাদিত পণ্যের ভাগ দিতে বাধ্য। জমিদার সরকারী রাজস্ব ব্যবস্থার অধীনস্ত। একজন কৃষক ও রাজস্ব-জোতদার। ভারত বিজয়ের পর থেকে মোগল শাসকগণ তাদের আয়ের নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব কেন্দ্রে আনা ও প্রশাসনিক ব্যয়ের জন্য পুনরায় বরাদ্দ দেয়া কার্যক্রমটিতে জটিলতা দেখা দিতো। এর নিরসনের জন্য অঞ্চল ভেদে স্থানীয় নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের পর তাদের নিজেদের অংশ রেখে বাকি অংশ কেন্দ্রে পাঠানোর কার্যক্রমের অধীনে তৈমুরের বংশধরগণ দেশে বিদ্যমান বিশ্বস্ত, বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং অনুদার মনোবৃত্তির ব্যক্তিবর্গের উপর নির্ভর করতে থাকে। এই ক্ষতিকারক কার্যক্রমটির বিকল্প হিসাবে আমলাতান্ত্রিক সমাধান প্রবর্তন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং কর ও শুল্ক ব্যবস্থার সংস্কার সাধনের প্রয়োজনীয়তা ছিল । কিন্তু সেটা হয়নি। এমন কি মোগল রাজত্বের অবসানের পর ইংরেজরা এই জগদ্দল । ব্যবস্থার কোন সংস্কার তো করেই নাই, বরং বিষয়টিকে আরও জটিল ও ক্ষতিকারক করে তোলে। বিশেষ করে ‘চিরস্থায়ী বন্দবস্ত’ চালু করে বাংলার রাজস্ব ও সমাজ ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাচীন বাংলার সুন্দর সামাজিক স্তর বিন্যাসকে ভেঙে ফেলে পরিবেশকে আরও ভয়াবহ করে তোলে । সদালাপী, মিষ্টভাষী প্রফেসার (সদ্যপ্রয়াত) শিরিন আখতার (দীর্ঘকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ও বিভাগীয় সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির একনিষ্ঠ সহযোগী যোদ্ধা। শিরিন আখতার কর্তৃক সুলিখিত গবেষণাগ্রন্থ ‘সুবে বাংলার জমিদার ও জমিদারী ১৭০৭-১৭৭২। গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট অনুবাদক সিদ্দিক মাহমুদুর রহমান। বাঙলা ইতিহাসের বিস্মৃতপ্রায় বিষয় নিয়ে লেখা এই গ্রন্থটি একটি ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সংযোজন বলে বিবেচিত হবে। বলে আশা রাখি ।
সূচি * প্রসঙ্গ কথা-৯ * প্রাথমিক আলোচনা-১১ * অধ্যায় একঃ জমিদার ও জমিদারি-১৭ * অধ্যায় দুইঃ জমিদার শ্রেণির স্থায়িত্ব ও পরিবর্তন-৩৪ * অধ্যায় তিনঃ জমিদার ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা-৫০ * অধ্যায় চারঃ জমিদারদের সামরিক শক্তি ও দায়িত্ব-৭৪ * অধ্যায় পাঁচঃ জমিদারগণের পুলিশী কার্যক্রম-৯০ * অধ্যায় ছয়ঃ আইনি প্রশাসনে জমিদারগণের ভূমিকা-১১০ * জমিদারি ডাক-১৩২ * উপসংহার-১৩৬ * পরিশিষ্ট-১৪৬ * গ্রন্থসূত্র-১৪৭
জন্ম ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬, যশোরে। স্কুল জীবন (১৯৫৩-১৯৬৫) কলকাতায় পিতার চাকুরীসূত্রে, কলেজ জীবন (১৯৬৫-৬৯) যশোরে। স্নাতক পাশ করার পর মুক্তিযুদ্ধের কারণে স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারেননি। প্রায় এক দশক সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করার পর ১৯৮০ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে শিক্ষা, প্রশাসন, প্রকাশনা, সম্পাদনা, অনুবাদ, সমন্বয়, জনসংযোগ বিভিন্ন পেশায় ও দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘ ত্রিশ বছর। সিদ্দিক মাহমুদ অনুবাদকর্মে দেখিয়েছেন অসামান্য দক্ষতা। এ যাবত অনুবাদ করেছেন প্রায় তিন হাজার বাংলা কবিতা, প্রকাশিত হয়েছে পঁচাত্তরটি গ্রন্থ। এছাড়াও তাঁর রয়েছে বেশ কয়েকটি গবেষণাগ্রন্থ, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, গল্পগ্রন্থ ও কবিতার বই।