"বাংলার সুফি পির-দরবেশ : ইতিহাস ও ঐতিহ্য" বইয়ের পিছনের কভারের লেখা: সুফিসাধক পির-দরবেশ, আলেম-মৌলানা-মখদুম প্রভৃতি আধ্যাত্মিক তত্ত্ববিদ ও শাস্ত্রজ্ঞানী শিতিশ্রেণি। তারা অনেকে। কেবল ইসলামপ্রচারের উদ্দেশ্য নিয়েই বঙ্গদেশে আগমন করেন। তাদের অনেকে অসীম দুঃখকষ্ট ভােগ করেন, নানা বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হন, এমন কি দ্বন্দ্বসংঘাতে জড়িয়ে পড়ে জীবন উৎসর্গ করেন। শাসকগণ সৈন্যপরিবেষ্ঠিত হয়ে দুর্গে বাস করতেন। সুফিসাধকগণ শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে এমন কি দুর্গম বনে-জঙ্গলে আস্তানা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে থেকে তাদের কাছে আকর্ষণ করে ধর্মপ্রচার করেছেন। বঙ্গদেশে ধর্মান্তরকরণের মূল দায়িত্ব পালন করেন এসব অভিবাসী সুফিসাধক পির-দরবেশগণ। ষােলাে শতকের গােড়ার দিকে আশরাফ জাহাঙ্গির সিমনানি (মৃত ১৪১৪) বলেন যে, বঙ্গদেশে নগর তাে দূরের কথা, এমন কোনাে শহর ও গ্রাম নেই, যেখানে ধার্মিক সাধকগণ (holy saints) আগমন ও বসতি স্থাপন করেন নি। তিনি ইরানের সিমনান দেশের অধিবাসী ছিলেন। তিনি পাণ্ডুয়ার শেখ আলাউল হকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ৬ বছর আধ্যাত্মিক সাধনা করেন এবং মুর্শিদের খলিফাত্ব নিয়ে তাঁর নির্দেশে জৌনপুরে ইসলাম প্রচার করেন। উত্তর প্রদেশের আম্বেদকর নগরে তাঁর মাজার আছে। আশরাফ জাহাঙ্গির সিমনানি সমকালের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে এরূপ মন্তব্য করেছিলেন। মধ্যযুগের সাড়ে পাঁচ বছরের পরিসরে কতজন পির-দরবেশ। বঙ্গদেশে এসেছিলেন, তার কোনাে পরিসংখ্যান নেই। প্রথম শ্রেণির শতাধিক সুফিসাধকের নামধাম আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি, কিন্তু তাদের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক গুণ বেশি ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। তারা অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত, সামাজিকভাবে নির্যাতিত, মানবিকভাবে অবহেলিত, রােগশােকে পীড়িত দীনদুঃখী মানুষের সাথে মিশে ও পাশে থেকে তাদের আশ্রয়দান, অন্নদান, সেবাশুশুরূষা করেছিলেন।
Title
বাংলার সুফি পির -দরবেশ : ইতিহাস ও ঐতিহ্য (মধ্যযুগ)
জন্ম : ৫ এপ্রিল ১৯৪১। শিক্ষা : এমএ, পিএইচ-ডি, ডি-লিট। পেশা ও পদ : অধ্যাপনা, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; প্রাে-উপচার্য : ঢাবি; উপাচার্য : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ।। জাতীয় পুরস্কার : বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪); একুশে পদক (২০০৪)। পদক : মনিরুদ্দীন পদক, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬২); আবদুর রব চৌধুরী স্বর্ণপদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮০); মুহম্মদ ইব্রাহিম স্মারক স্বর্ণপদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯০): দীনেশচন্দ্র সেন স্বর্ণপদক, কলিকাতা (২০০৫)। গ্রন্থ : গবেষণামূলক ত্রিশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ : উনিশ শতকে বাঙালি মুসলমানের চিন্তা ও চেতনার ধারা (১৯৮৩, ১৯৯৭); বাংলার লােকসংস্কৃতি (২০০৬, ৬ষ্ঠ সং); বাংলা রােমান্টিক প্রণয়ােপাখ্যান (২০০৯, ৮ম সং); বাংলা সাহিত্যের পুরাবৃত্ত (অখণ্ড ২০০২, ৩য় সং); বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবী (১৯৮৫, ২০০১); বাংলায় বিদেশী পর্যটক (২০০১, ৩য় সং); বাংলা লােকসংগীতের ধারা (২০০৬); বাংলা লােকসাহিত্যের ধারা (২০০৬); লালন গীতি সমগ্র (২০০২, ২০০৫); বাংলার রেনেসা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০৪); লােকসংস্কৃতি (২০০৭); লােককলা তত্ত্ব ও মতবাদ (১৯৯৯, ২০০৭) বাংলার লােক-জ্ঞান ও লােক-প্রযুক্তি (২০১০); বাংলা লৌকিক জ্ঞানকোষ (২০১০); বাংলা কাব্যের রূপ ও ভাষা (২০০৩, ৩য় সং); লােককলা প্রবন্ধাবলি (২০০৫, ২য় সং)।