চল্লিশ হাদিস-শিশুতোষ গল্প নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা জাজিরাতুল আরবের বুক চিরে, তপ্ত বালুকায় চিক চিক আলোকরশ্মির ঢেউ তুলে এসেছিলেন একজন মরু সাইমুম- যিনি শত শত বছরের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুললেন। অন্ধকার দূরীভূত হলো, মানুষ জেগে উঠল একরাশ সোনালি আভায়। পথহারা মানুষ ফিরে পেলো সঠিক পথের দিশা। আর তিনিই হলেন আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ সা.। মানুষ যা কিছু সুন্দর ও মহৎ কল্পনা করতে পারে, নবিজি এককভাবে ছিলেন তার বাস্তব উদাহরণ। তাঁর মহান চরিত্র চির আধুনিক- যা কখনো সেকেলে বা পুরাতন হয় না বরং তা যেকোনো যুগ বা কালের সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে। আর এটিই ‘খুলুকে আজিম’ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ পৃথিবী যখন যেই সমস্যার সম্মুখীন হবে, রসুল সা. এর চরিত্র ও সুন্নাহ তখন কার্যকর প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। মহানবি সা. তার চারিত্রিক পরশ পাথরের মাধ্যমে বিশ্ব সমাজকে সুন্দরভাবে পরিগঠন করতে প্রয়াস চালান। সততা, নৈতিকতা, সভ্যতা, শালীনতা, পবিত্রতা ও শিষ্টতাসহ অসংখ্য নীতি ও পদ্ধতি তার জীবন থেকে বের হয়ে অন্যদের আলোড়িত করেছেন। যেমন, ‘সত্যবাদিতা’র জন্য আরববাসী তাকে কিশোর বয়সেই ‘আল আমিন’ এবং ‘আস সাদিক’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। এছাড়া নবিজির শিশুপ্রেমও সর্বজনবিদিত। একটি স্বপ্নিল পৃথিবীর জন্য তথা পৃথিবীকে মানুষের বাস উপযোগী করার জন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত মুহাম্মদ সা.-এর মহান চরিত্রের অনুসরণ করা। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বয়স বিচারে মনোবিকাশের উৎকৃষ্ট সময় শিশু-কিশোরকাল। এক্ষেত্রে সৃজনশীল সাহিত্য বিশেষ করে গল্প হলো তাদের অন্যতম প্রধান উপজীব্য। আর সেই গল্পের মধ্যে যে আদর্শ থাকে, তা তাদের মনোবিকাশে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। কাদামাটির মতো নরম মনের এ শিশুদের বিকাশের জন্য তাই প্রয়োজন একটি সর্বজনীন ও উত্তম আদর্শ। আর রসুল সা. হলেন আমাদের সর্বকালের সর্বোত্তম আদর্শ -যা মানুষকে ভেতর থেকে বদলে দেয়, আলোকিত মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই নবিজির কথা, কাজ বা নির্দেশনার আলোকে রচিত শিশুতোষ গল্প যেমন শিশুদের মনোবিকাশ ও আনন্দদানে সক্ষম, তেমনি উন্নত নৈতিকতার আলোকচ্ছ্বটায় তা হয়ে উঠবে একজন আদর্শবান ও আলোকিত মানুষ গড়ার চাবিকাঠি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তুর্কি মুসলিম স্কলার প্রফেসর ড. মেহমাত ইয়াসার কানদেমির রচিত 40 Stories Hadiths for Children গ্রন্থটির বঙ্গানুবাদ কিছুটা পরিমার্জিত আকারে ‘৪০ হাদিস-শিশুতোষ গল্প’ শিরোনামে প্রকাশ করা হলো। সহজবোধ্য ও প্রাঞ্জল ভাষায় শিশুদের উপযোগী এই গ্রন্থটি কোমলমতি সকল শিশু-কিশোরদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হবে। এছাড়া এটি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লেবেলের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই অথবা সহায়ক বই হিসেবে কাজে লাগবে। রসুল সা.-এর বাণীসমূহকে হাদিস বলে। প্রিয় নবি মুহাম্মদ সা. কুরআন অর্থাৎ আল্লাহর আদেশসমূহ নিয়ে এসেছেন আমাদের মুক্তির জন্য। রসুল সা. হাদিসের মাধ্যমে সেসব ঐশী বাণী ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর সা. এই বাণীর মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে সফল হতে পারি। আমরা যদি আল্লাহর আদেশসমূহ ভালোভাবে অনুধাবন করে আমাদের ধর্মকে সঠিকভাবে বুঝে পালন করতে চাই, তাহলে অবশ্যই রসুল সা.-এর হাদিসসমূহ অধ্যয়ন করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া থেকে উসূলুদ্দিন ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক (ইসলামি শিক্ষা) হিসেবে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত আছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার দা‘ওয়াহ এ- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ হতে অনার্স এবং মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থানসহ অনার্স পরীক্ষায় ফ্যাকাল্টি ফার্স্ট হওয়ায় তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক দেয়া শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মাননা “প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০০৬” অর্জন করেন। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত কামিল (ফিক্হ), কামিল (হাদিস) সহ অন্যান্য পরীক্ষাসমূহেও ১ম শ্রেণিসহ মেধাতালিকায় স্থান করে কৃতিত্বের সাথে উত্তির্ণ হন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং কনফারেন্সে ২৫টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে তুরস্ক, নাইজেরিয়া, মিশর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিআরব, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ইন্ডিয়া ভ্রমন করেছেন। এটি তাঁর লেখা দ্বিতীয় মৌলিক গ্রন্থ। তাঁর লেখা প্রকাশিত গ্রন্থ “তারাবীহতে পঠিত ধারাবাহিকতায় আল-কুরআনের বক্তব্য” এবং একটি অনুবাদগ্রন্থ ইতিমধ্যেই পাঠক সমাজে সাড়া জাগিয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি মৌলিকগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়। তাঁর লেখা ২৩টি গবেষণা প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রিসার্স জার্ণালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জাতীয় বংলা এবং ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাতেও নিয়মিত লেখালেখি করেন। ড. ওবায়দুল্লাহ ২৫ ডিসেম্বর ১৯৮০ ইং সালে সাতক্ষীরা জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আমিন উদ্দীন গাজী এবং মাতা মরহুমা সুফিয়া আমিন।