"আলিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ আলিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস কোন একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষের ইতিহাস নয়, এটা মূলত তদানীন্তন সুবায়ে বাংলার আরবী শিক্ষা তথা গােটা মুসলমান জাতির শিক্ষা, মর্যাদা এবং আপন বৈশিষ্ট্য রক্ষার সংগ্রাম বিধৃত একটি করুণ আলেখ্য। আজ বক্ষ্যমাণ এই গ্রন্থের ভূমিকা লিখতে স্বভাবতই মন কতগুলাে বিশেষ কারণে আবেগ-আপ্লুত হয়ে ওঠে। আর তা হলাে অতীতে প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের অনৈক্য। ভাবতে অবাক লাগে, ইংরেজ শাসিত দেশে মুসলমানরা আলিয়া মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল আজও তা কেন ফলবতী হতে পারেনি, আজ নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে। মুসলমানরা ছিল বীরের জাতি, ইংরেজ বেনিয়ারা ছলে-বলে-কৌশলে তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাদের প্রচলিত ধর্ম, শিক্ষা ও মর্যাদা হরণ করার জন্য পদে পদে যেসব ষড়যন্ত্র আরােপ করেছিল, আলিয়া মাদ্রাসা তারই একটি ফসল। বাহ্যত এই প্রতিষ্ঠানের পত্তন করা হয়েছিল আলাদা জাতি হিসাবে মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের নিমিত্ত, যাতে মুসলমানদের ধর্ম, কৃষ্টি ও আদর্শ রক্ষা পায়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়াই ছিল তাদের আসল উদ্দেশ্য। গ্রন্থটির আদ্যপান্ত পাঠ করলে স্বভাবতই মনে হবে আলিয়া মাদ্রাসা পত্তন করে ইংরেজরা কোনদিনই এই প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়নি। বরং কৌশলে এই প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের ক্রীড়নক হিসাবে ব্যবহার করে এবং ইংরেজি ভাষা ও কৃষ্টি চাপিয়ে দেয়ার জোর চেষ্টা চালায়। ফলে, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সত্যিকারভাবে ইংরেজদের আশা যেমন। পূরণ হয়নি, তেমনি পুরােপুরিভাবে মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষারও পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি'। সেই একই রকম দ্বন্দ্ব এবং মিশ্র প্রয়াস নিয়ে এই আলিয়া মাদ্রাসা (এবং অসংখ্য অনুসৃত মাদ্রাসা) আজো দাঁড়িয়ে আছে।
আবদুস সাত্তারের জন্ম ভোলা জেলার কালিকীর্তি গ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষা নিজ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। তারপর ভোলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতক ও মাস্টার্স। জনাব সাত্তার আমেরিকার ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করার পর কর্ম জীবন শুরু করেন। তাঁর লেখা প্রকাশিত কিছু গল্প আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য। বিগত পঁচিশ বছর ধরে তিনি আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা হিসাবে কর্মরত। তিনি তাঁর স্ত্রী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস শহরে বাস করেন।